লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার তথা সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় প্রয়াত হলেন ।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯। সোমবার সকাল সওয়া ৮টা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
দীর্ঘ দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন সোমনাথবাবু। দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছিল।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছাড়াও কিডনি কাজ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ডায়ালিসিস চলাকালীনই হৃদ্রোগেও আক্রান্ত হন তিনি। এর পর থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক হতে থাকে। বসাতে হয় পেসমেকার।
আগেও একবার দীর্ঘ দিন বার্ধক্যজনিত সমস্যায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ১ অগস্ট তিনি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। কিডনির সমস্যায় গত বৃহস্পতিবার তাঁকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। আজ, সোমবার তাঁর ডায়ালিসিস হওয়ার কথা ছিল। এ দিন সকালেই তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। কিন্তু এ দিন সকালেই মারা যান তিনি।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বরাবরই তাঁর বক্ততা তথা বাচনভঙ্গির জন্য প্রশংসিত হয়েছেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। ১৯৬৮ সালে সিপিএমে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে প্রথম বার সাংসদ হয়েছিলেন সোমনাথবাবু। ২০০৮-এ দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বহিষ্কৃত হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রায় ৪০ বছর সিপিএমের সদস্য ছিলেন। এর পর থেকে সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরেই থেকেছেন তিনি। তবে বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর মতামত জানাতে কখনও পিছপা হননি।
১০ বারের সাংসদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় জীবনে এক বারই নির্বাচনে হেরেছিলেন। ১৯৮৪-এ যাদবপুর কেন্দ্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পরাজিত হন তিনি। এর পর বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জিতে ফের সাংসদ হন। ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত লোকসভার স্পিকারের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি।
সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে দেশের রাজনীতির স্তম্ভ বলে আখ্যা দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে বলেন, “ভারতীয় রাজনীতির স্তম্ভ ছিলেন প্রাক্তন সাংসদ ও স্পিকার শ্রীসোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রের ভিত্তিকে আরও সমৃদ্ধ করেছিলেন। সেই সঙ্গে দরিদ্র ও দুর্বলদের মঙ্গলকামনার পক্ষে এক সরব ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে আমি বেদনাহত। তাঁর পরিবার এবং সমর্থকদের পাশে রয়েছি।”
বাম রাজনীতিক বা দুঁদে পার্লামেন্টেরিয়ান সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে কে না চেনেন! তাঁর রাজনৈতিক বা সংসদীয় জীবনের নানা ওঠাপড়ার মুহূতের্র কথা বহুল প্রচারিত। কিন্তু ক্রীড়াপ্রেমী সোমনাথবাবু বাংলার ক্রীড়া প্রশাসনেও থেকে গিয়েছেন আমৃত্যু। রীতিমতো সক্রিয় ভাবে।
বিশ্ব ফুটবলে মারাদোনা আর আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। এ বারও বিশ্বকাপ দেখেছেন। কন্যা অনুশীলা বসু জানালেন, “আর্জেন্টিনা হেরে যাওয়ার পর বাবাকে বললাম, এ বার তুমি কী করবে! ফাইনালে সাপোর্ট করেছিল ক্রোয়েশিয়াকে।”
মোহনবাগান সচিব অঞ্জন মিত্র আজও ভোলেননি প্রথম বার তাঁর ক্লাব সচিব হওয়ার সময়টা। তাই এক কথায় বলে ফেললেন, ‘‘সোমনাথদা না থাকলে আমার সচিব হওয়া হত না। উনিই আমাকে ক্লাবের সচিব বানিয়েছিলেন।’’ সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত অঞ্জন মিত্রর সঙ্গে অনেক ভাল স্মৃতি। অনেক লড়াই একসঙ্গে লড়েছেন দু’জনে। ক্লাবকে খারাপ সময় থেকে ভাল সময়ে নিয়ে এসেছেন। একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে ক্লাবের জন্য লড়েছেন। তবে ক্লাবের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি দেখে কষ্ট পেতেন। অঞ্জন মিত্র বলছিলেন, ‘‘১৯৯৫ পর্যন্ত ক্লাবের এগজিকিউটিভ কমিটির সদস্য ছিলেন। আমরা একসঙ্গেই জিতে এসেছিলাম ক্লাব প্রশাসনে। সেই সময় ক্লাবের বেশ কিছু কেস চলছিল, সব নিজে সামলেছিলেন। ক্লাবের মধ্যে সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছিলেন।’’
ডব্লিউবিটিটিএ কাউন্সিল সদস্য দেবাশিস চক্রবর্তী বলছিলেন, ‘‘সোমনাথদার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে আবার কয়েক দিন পর মিটিং করতে আসব। উনি যে ভাবে এত দিন অ্যাসোসিয়েশন চালিয়েছেন, সেটাই আমাদের গাইড বুক। তাঁর পরিবর্ত কেউ হতে পারবেন না।’’
একটা সময় দায়িত্ব থেকে ছুটি চেয়েছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু ডব্লুবিটিটিএ-র সদস্যরা তাঁকে ছাড়তে চাননি। দেবাশিস চক্রবর্তী বলছিলেন, ‘‘সোমনাথবাবু ছিলেন বলে আমরা টুর্নামেন্ট আয়োজনে রেকর্ড করেছিলাম। একই বছরে সব ক’টা ন্যাশনাল আয়োজন বিটিটিএ। ২০১০, ২০১৫, ২০১৭তে তিনটি বয়স ভিত্তিক জাতীয় টুর্নামেন্ট, ৭টি ইস্ট জোন, দুটো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছিলাম। সোমনাথবাবু বলতেন— তোমরা আয়োজন করতে পারলে আমার সবুজ সঙ্কেত আছে। টাকা-পয়সা নিয়ে আমাদের ভাবতে হত না। তাঁর দেখানো পথে আমরা আবার পারব বাংলার টেবল টেনিসে জোয়ার আনতে।’’ সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।