ইলা মিত্র ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।
জন্মসূত্রে তার পদবী ইলা সেন। তাঁর বাবা নগেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের অধীন বাংলার এ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেল। তাঁদের আদি নিবাস ছিল তৎকালীন যশোরের ঝিনাইদহের বাগুটিয়া গ্রামে।
বাবার চাকরির সুবাদে তাঁরা সবাই কলকাতায় থাকতেন। বেড়ে ওঠেন কলকাতায়, লেখাপড়া করেন বেথুন স্কুল ও বেথুন কলেজে।
তিনি ১৯৪৪ সালে স্নাতক শ্রেণীতে বি.এ ডিগ্রী অর্জন করেন। পরে ১৯৫৮ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে এম এ ডিগ্রী লাভ করেন। কৈশোরে তিনি খেলাধুলায় তুখোড় ছিলেন। ১৯৩৫ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন রাজ্য জুনিয়র এ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়ন। সাঁতার, বাস্কেটবল ও ব্যাডমিন্টন খেলায়ও তিনি ছিলেন পারদর্শী।
তিনিই প্রথম বাঙালী মেয়ে যিনি ১৯৪০ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকের জন্য নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে অলিম্পিক বাতিল হয়ে যাওয়ায় তার অংশগ্রহণ করা হয়নি। খেলাধুলা ছাড়াও গান, অভিনয়সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী।
ইলা সেন যখন বেথুন কলেজে বাংলা সাহিত্যে বি.এ সম্মানের ছাত্রী তখন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে পরিচয় ঘটে। নারী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তার রাজনীতিতে প্রবেশ। সময়টা ছিল ১৯৪৩ সাল, ইলা সেন কলকাতা মহিলা সমিতির সদস্য হলেন।
হিন্দু কোড বিলের বিরুদ্ধে ঐ বছরই মহিলা সমিতি আন্দোলন শুরু করে। সমিতির একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে তিনি এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ সময় তিনি সনাতনপন্থীদের যুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অনেক প্রচার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি নামক সংগঠনের মাধ্যমে নারী আন্দোলনের এই কাজ করতে করতে তিনি মাত্র ১৮ বছর বয়সে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ করেন।
১৯৪৫ সালে ইলা সেনের বিয়ে হয় দেশকর্মী কমিউনিস্ট রমেন্দ্র মিত্রের সঙ্গে। রমেন্দ্র মিত্র মালদহের নবাবগঞ্জ থানার রামচন্দ্রপুুর হাটের জমিদার মহিমচন্দ্র ও বিশ্বমায়া মিত্রের ছোট ছেলে। বিয়ের পর বেথুনের তুখোড় ছাত্রী ইলা সেন হলেন জমিদার পুত্রবধূ ইলা মিত্র।
টানা প্রায় আড়াই বছর জেল-হাজত খাটার পর তিনি ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের সময়ে জামিনে মুক্তি পান। মুক্তি পওয়ার পর ইলা মিত্র কলকাতায় চলে যান উন্নত চিকিৎসার জন্য। এর পর তার আত্মীয়-স্বজনরা আর এদেশে আসতে দেননি।
তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় কলকাতা শহরের মানিকতলা বিধান সভা আসনে ১৯৬২ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত কম্যুনিস্ট পার্টির (সিপিএম) হয়ে চারবার বিধায়ক নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি নানাভাবে সহযোগিতা করেন।
২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর এই বীর নারী ৭৬ বছর বয়সে কলকাতায় ইহলোক ত্যাগ করেন।
ইলা মিত্র অনেক বই রচনা করেন। হিরোশিমার মেয়ে বইটির জন্য তিনি ‘সোভিয়েত ল্যান্ড নেহরু’ পুরস্কার লাভ করেন।এ ছাড়া ভারত সরকার তাকে স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে স্বতন্ত্র সৈনিক সম্মানে তাম্রপত্র পদকে ভূষিত করেন। এ্যাথলেটিক অবদানের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পুরস্কার লাভ করেন।