নরসুন্দা ডটকম ডেস্ক:
পরিবেশ এবং প্রান্তিক মানুষদের জন্য কাজ করা অন্তত কুড়িটি ভারতীয় সংগঠন বলছে বাংলাদেশের রামপাল প্রকল্প থেকে পিছিয়ে আসা উচিত ভারতের। তাদের কথায় এর ফলে শুধু বাংলাদেশের ভেতরে নয়, ভারতীয় সুন্দরবন এবং পূর্বভারতের উপকূল অঞ্চলেও পরিবেশ ও মানুষের জীবিকার ওপর এর প্রভাব পড়বে।
এই নিয়ে ভারত সরকারের ওপরে চাপ বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনগুলি।
ভারতীয় সংগঠনগুলি বলছে, বাংলাদেশে যেভাবে রামপাল বিরোধী আন্দোলন চলছে, তারপরেও ভারতের ওই প্রকল্পে জড়িত থাকা কখনই উচিত হবে না।
প্রকল্পটি সুন্দরবনের কিছুটা বাইরে তৈরী হলেও তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব গোটা সুন্দরবন এবং তার বাইরের এলাকাতেও পড়তে বাধ্য বলেই মনে করছে পরিবেশবাদী এবং বনাঞ্চলের মানুষদের জীবন-জীবিকা নিয়ে কাজ করা এইসব সংগঠনগুলি।
বনাঞ্চল বা পরিবেশ যেহেতু কোনও ভৌগলিক সীমারেখা মানে না, তাই ভারতের সুন্দরবন এবং পূর্বভারতের উপকূলীয় এলাকাগুলিতেও রামপাল প্রকল্পের প্রভাব পড়তে বাধ্য বলে মনে করছে এই সংগঠনগুলো।
অল ইন্ডিয়া ইউনিয়ন অফ ফরেস্ট ওয়ার্কিং পিপল্ বনাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে আন্দোলন করে থাকে। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অশোক চৌধুরীর কথায়, “সুন্দরবনের ওপরে প্রভাব পড়লে যে বিপর্যয় নেমে আসবে, তা থেকে আমাদের সুন্দরবনও বাদ থাকবে না। আর পূর্ব উপকূলের বিস্তীর্ন অঞ্চলেও এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। ম্যানগ্রোভ অরণ্যই তো সমুদ্র থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে এই অঞ্চলকে, তাই ম্যানগ্রোভ যদি চলে যায়, তার প্রভাব কতটা সুদূরপ্রসারী হতে পারে, আমরা সেটা কল্পনাও করতে পারব না।”
মি. চৌধুরী আরও যোগ করছিলেন যে সুন্দরবনের পরিবেশ ধ্বংস হলে কয়েক লক্ষ মানুষ তাঁদের জীবন জীবিকাও হারাবেন – দুই দেশের সুন্দরবনেই।
রামপাল-বিরোধীতায় যে ভারতীয় সংগঠনগুলো নেমেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল এলায়েন্স ফর পিপলস মুভমেন্ট বা এন এ পি এম। নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন সহ বিভিন্ন সংগঠনের জাতীয় মঞ্চ এটি।
সংগঠনটির আহ্ববায়ক মধুরেশ কুমার জানাচ্ছিলেন, “ভারতের করদাতাদের অর্থ কখনই প্রতিবেশী কোনও দেশে উন্নয়নমূলক সাহায্যের নামে পাঠানো উচিত নয়, যখন সেদেশের মানুষরাই এই প্রকল্পের বিরোধীতা করছেন। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের অবদানের কারণে সেদেশের মানুষদের কাছে ভারত সমাদৃত – কেন সেটা নষ্ট করা হচ্ছে একটি মাত্র বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য?”
মি. কুমার আরও বলছিলেন, এই প্রকল্পে যদিও এখন ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থাগুলিই সামনে রয়েছে কিন্তু সবাই জানে আসলে কোন ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর স্বার্থ জড়িয়ে আছে রামপালে!
প্রশ্ন আরও উঠছে, যেখানে ভারতের আদালত নানা সময়ে পরিবেশগত কারণে বিদ্যুৎ প্রকল্প আটকিয়ে দিয়েছে, সেখানে প্রতিবেশী দেশের পরিবেশ নষ্ট করতে পারে, এমন একটি প্রকল্পে কেন ভারত সরকার সাহায্য করছে।
মি. অশোক চৌধুরী বলছিলেন, “বাংলাদেশে যদি পরিবেশগত ছাড়পত্র সহ কঠোর নিয়মকানুন না-ও থাকে, তবুও ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব কোম্পানিগুলির তো নৈতিক দায়িত্ব যে ভারতের পরিবেশ আইন মেনেই কাজ করা! সেগুলো তো তারা করছে না রামপালের ক্ষেত্রে!”
“পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরে নয়াচর-নন্দীগ্রামে পেট্রো রসায়ন হাব তৈরীর কাজ থেকে কেন্দ্রীয় সরকার পিছিয়ে এসেছে যে সেটি সুন্দরবন আর সমুদ্র উপকূলের খুব কাছে এবং ওই প্রকল্প হলে পরিবেশ নষ্ট হতো, এই যুক্তিতে। এখন তাহলে পাশ্ববর্তী দেশের পরিবেশের ব্যাপারে কেন সরকার অন্য সুরে কথা বলছে?” প্রশ্ন মধুরেশ কুমারের।
অশোক চৌধুরী নিজে রামপাল বিরোধী লংমার্চে অংশ নিতে গিয়েছিলেন সংগঠনের আরও কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে।
তিনি জানাচ্ছিলেন, ওই লংমার্চে যেভাবে ভারত বিরোধী স্লোগান উঠতে শুনেছেন তাঁরা, সেই মনোভাব কাজে লাগাতে পারে কট্টরপন্থী সংগঠনগুলো। ভারতের কখনই ওইসব কট্টরপন্থীদের সুযোগ করে দেওয়া উচিত হবে না।
আপাতত যে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থাগুলি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে জড়িত, তাদের কাছে এবং সরকারের কাছে আবেদনই জানানো হবে বলেই এই সংগঠনগুলি ঠিক করেছে। একই সঙ্গে সাধারন মানুষকেও রামপালের ক্ষতিকর দিকগুলি নিয়ে সচেতন করে একটা দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে এই সংগঠনগুলির।
রিপোর্ট:
নোট: ছবি সংগ্রহ।