দেশ-বিদেশ

মায়ের চিকিৎসার জন্য নিজেকে বিক্রির বিজ্ঞাপন মেয়ের

নরসুন্দা ডটকম   November 22, 2016

নরসুন্দা ডটকম ডেস্ক:

১৯ বছরের একজন তরুণীর পক্ষে এর চেয়ে বেশি আর কী সম্ভব ছিল? তাই বলে নিজেকে বিক্রির বিজ্ঞাপন? আপাতত এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো তরজা শুরু হয়ে গেছে।

কেউ বলছেন, ‘মেয়েটি যা করেছে তা একদমই ঠিক করেছে। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এ ঘটনা সমর্থন করে।’ আবার কেউ বলছেন, ‘যদিও এই মেয়েটি হয়তো নিষ্পাপ। তবুও এই ঘটনা বাড়াবাড়িই বটে। এ ধরণের কাজ সমর্থন করা অনুচিত।’ আবার অনেকে বলছেন, ‘মেয়েটির জায়গায় থাকলে আমরা হয়তো একই কাজ করতে বাধ্য হতাম। সবটাই আদতে পরিস্থিতির চাপে কিনা!’
সত্যিই কি মেয়েটার আচরণ সঙ্গত, না কি বাড়াবাড়ি? কী সেই পরিস্থিতি?

চিনের ১৯ বছরের তরুণী কাও মেনজিউয়াং ৪৫ বছরের অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য চিনা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের শরীর বিক্রির কথা লিখেছেন। কাও নিজের পারিবারিক অবস্থানের কথা জানিয়ে লিখেছেন, দক্ষিণ চিনের গ্যঝাং শহরের মেয়ে তিনি। মায়ের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড়। তাই মাকে সুস্থ করে তোলাটা তাঁরই দায়িত্ব। তাঁর মা সারাজীবনই চাষবাস করে কাটিয়েছেন। সম্প্রতি কাওয়ের মায়ের ত্বকে ক্যানসার ধরা পড়েছে। তিনি গ্যঝাংয়ের সাধারণ হাসপাতালে ভর্তি। এরই মধ্যে তাঁর ডান উরুতে গভীর সংক্রমণ শুরু হয়েছে। ডাক্তারদের মতে, কাওয়ের মাকে আরও বড় হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা বাঞ্ছনীয়।

কাওয়ের মায়ের কোনও স্বাস্থ্যবিমা করা নেই। চিকিৎসার জন্য এখনই দরকার ৩৫ লক্ষ ইউয়ান। সেই টাকা জোগাড় করার সামর্থ্য কাওয়ের পরিবারের নেই। তাই কাও নিজের স্বল্পবসনে তোলা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লিখেছেন, ‘কোনও সহৃদয় ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে আমাকে কিনে নেন, তবে আমি মায়ের চিকিৎসা করাতে সক্ষম হব। পরিবর্তে এই টাকা হস্তান্তরিত হওয়ার পর আমি ওই ব্যক্তির ইচ্ছেমতো চলব। তিনি যা বলবেন, আমি তাই করব। আমি যা বলেছি তার অন্যথা হবে না। যিনি আমাকে সবচেয়ে বেশি টাকা দেবেন, আমি তারই কাছে নিজেকে বিক্রি করব।’

এ কথা লেখার পরই কাও নিজের যোগাযোগ নম্বর দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, আর্থিক টানাটানিতে বেশিদূর পড়তে পারেনি। হাইস্কুল ছেড়ে কাজে ঢুকে পড়েছেন। এতে মাসে তার ১০০০ ইউয়ানেরও কম রোজগার হয়। বৃদ্ধ বাবা আর ছোট ছোট ভাইবোনদের দেখতেই তাঁর সব টাকা শেষ হয়ে যায়।

তবে এখানেই শেষ হয়ে যায়নি কাওয়ের লড়াইয়ের গল্প। হুয়াং কিলিয়াং নামে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার হাসপাতালে কাওয়ের মাকে দেখে এসে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। কাওয়ের বলা প্রত্যেকটা শব্দ সত্যি। হুয়াং জানিয়েছেন, কাওয়ের মায়ের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের জন্য একজন সহৃদয় ব্যক্তির সন্ধান মিলেছে। কিন্তু হুয়াং এটা বলেননি, এর বদলে কাওকে কী দিতে হবে। তবে স্বস্তির এটাই, তিনি জানিয়েছেন, ‘কাওকে আর এখন কিছুই বেচতে হবে না। সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে।’

About the author

নরসুন্দা ডটকম

Leave a Comment