কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার খড়গমারা গ্রামে শাফায়াত জামিলের পৈতৃক বাড়ি । একাত্তরে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে কমিশন পদে চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন। অত্যন্ত দুঃসাহসী একজন অফিসার হিসেবে তিনি সবার মাঝে পরিচিত ছিলেন। শাফায়াত জামিল সেনাবাহিনীতে কমিশন পান ১৯ এপ্রিল ১৯৬০ সালে, চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে।
একাত্তরের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানিরা গণহত্যা শুরু করে। তাদের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল সেসব স্থান যেখান থেকে প্রতিরোধ আসতে পারে। এগুলো হলো পাঁচটি ইস্ট বেঙ্গল ব্যাটালিয়ন, ইপিআর, রাজারবাগ ও জেলা পুলিশ লাইনস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসগুলো। পাকিস্তানি হাইকমান্ড কৌশল করে প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য অজুহাতে প্রথম, তৃতীয় ও চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে সেনানিবাসের বাইরে পাঠিয়ে দেয়। কৌশলের অংশ হিসেবে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গলের একটি কোম্পানি উপ-অধিনায়ক মেজর খালেদ মোশাররফের অধীনে ২৩ মার্চ কথিত নকশাল অনুপ্রবেশ প্রতিহত করতে শমসেরনগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
২৫ মার্চ অধিনায়ক লে. কর্নেল মালিক গিজার হায়াত খান (অবাঙালি) ব্যাটালিয়নের বাকি সৈন্যসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৌঁছান। ২৬ মার্চ মেজর শাফায়াত শমসেরনগরে মেজর খালেদ মোশাররফের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওয়্যারলেসে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিদ্রোহ করার নির্দেশ পেয়ে যান। ২৭ মার্চ তাঁবুতে স্থাপিত অফিস এলাকায় সব সতর্কতা অবলম্বন করে মেজর শাফায়াত জামিল বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত নেন। এর আগে কোম্পানিগঞ্জ পাবলিক কল অফিস থেকে এক অজ্ঞাত দেশপ্রেমিক তাকে টেলিফোনে জানান, পাকিস্তানি সৈন্য বোঝাই ১২টি আর্মির ট্রাক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে যাচ্ছে। মেজর শাফায়াত জামিল, লে. কবীর ও লে. হারুন ছিলেন সশস্ত্র। মেজর শাফায়াত জামিল অধিনায়ক লে. কর্নেল মালিক গিজার হায়াত খানকে উদ্দেশ্য করে ইংরেজিতে বলেন, “ইউ হ্যাভ ডিক্লেয়ার্ড ওয়ার অ্যাগেইনস্ট দি আনআর্মড পিপল অব আওয়ার কান্ট্রি। পার্পেট্রেইটেড জেনোসাইড অন আওয়ার পিপল। আন্ডার দ্য সারকামস্ট্যান্সেস উই আওয়ার এলেইজিয়ান্স টু দ্য পিপল অব বাংলাদেশ অ্যান্ড ইলেক্টেড রিপ্রেজেন্টেটিভস। উই আর আন্ডার অ্যারেস্ট। ইওর পার্সোনাল সেফটি ইজ মাই রেসপন্সিবিলিটি। প্লিজ, ডু নট ট্রাই টু ইনফ্লুয়েন্স আদারস।”
টেবিল উল্টে গেল। সেই সাথে বিদ্রোহ সম্পন্ন হয়ে গেল। ২২, ২৩ ও ২৪ এপ্রিল আখাউড়া, গঙ্গাসাগর ও সিঙ্গারবিল এলাকায় তুমুল যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন তিনি। অতঃপর ২৮ এপ্রিল মেজর খালেদের নির্দেশে ব্যাটালিয়নসহ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা জেলার সোনামুড়া, মধুকুমার সীমান্তবর্তী স্থান মতিনগরে অবস্থান নেন। এখানেই ঢাকা, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার যুবক যুদ্ধে যোগ দিতে উপস্থিত হন। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিকল্পিত প্রশিক্ষণ শুরু হয় এখানে। তখন কিছুই ছিল না মতিনগরে। আহার, বাসস্থান, পানীয় কিছুই না। এত অভাবেও প্রশিক্ষণার্থী মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো অভিযোগ ছিল না।
১৫ মে তিনি আগরতলা ত্যাগ করেন কলকাতার উদ্দেশে। সেখানে হিলি সীমান্তে ভারতীয় এলাকা কালুরঘাটে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন। প্রথম, তৃতীয় ও অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে মেঘালয়ের তেলচালায় জড়ো হয়। তৃতীয় ইষ্ট বেঙ্গল পৌঁছায় ১৭ জুন। ২৮ জুলাই প্রশিক্ষণ শেষ হয়। প্রথম ও অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলকে দায়িত্ব দেয়া হয় যথাক্রমে ৩১ জুলাই কামালপুরে এবং ৩ আগস্ট নকশী বিওপি দখল করার। তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গলকে দায়িত্ব দেয়া হয় ৩১ জুলাই বাহাদুরাবাদ ঘাট ধ্বংস এবং ঘাটটি অচল করে দেয়ার। ওই দিন থেকে তিন দিনের এই অভিযানে মেজর শাফায়াত ৪০০ সৈন্য নিয়ে বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট ও দেওয়ানগঞ্জে শত্রু অবস্থান আক্রমণ করেন। ৫ আগস্ট থেকে ১০ অক্টোবর তিনি রৌমারী থানা ও দেওয়ানগঞ্জের কিছু অংশ মুক্ত করেন। রৌমারীতে শেদালকাটিয়া যুদ্ধসহ কয়েকটি ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এলাকাটি মুক্তাঞ্চল হিসেবে রাখতে সক্ষম হন মেজর শাফায়াত জামিল। ২ থেকে ৫ অক্টোবর প্রায় ৪০০ মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বকশীগঞ্জে অবস্থিত পাকিস্তানি অবস্থানের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করেন। ৮ অক্টোবর ২০০ মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বিলমারী ঘাট আক্রমণ করেন। ১৩ অক্টোবর থেকে ১৮ অক্টোবর গোটা তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে তিনি ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি ও দোয়ারাবাজার দখল করেন। এই যুদ্ধে ৫ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর মীর শওকত আলী ও তার যোদ্ধারা সহায়তা করেন। ২২ অক্টোবর থেকে ২৭ নভেম্বর মেজর শাফায়াত জামিল সিলেটের আলুটিকা বিমানবন্দর ও গোয়াইনঘাট এলাকায় যুদ্ধ করেন। ২৮ নভেম্বর গোয়াইনঘাটের উত্তরে ছোটখেল দখল করেন এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে। এ যুদ্ধে তিনি আহত হয়ে ভারতের শিলংয়ে সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকেন ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ১৫ ডিসেম্বর সিলেটের লামাবাজি ফেরিঘাটের কাছে পুনরায় তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনি একাধিক গেরিলা আক্রমণে সফল হন। তাঁর দুঃসাহসিকতার কারণে একাধিক গেরিলা আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে ও পিছু হটতে বাধ্য হয়।
১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৫/৫ গোর্খা রেজিমেন্টের তিনটি কোম্পানি সিলেটের রাধানগরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ করে। কিন্তু তাদের সেই আক্রমণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে তারা রণেভঙ্গ দিতে বাধ্য হয়। তাঁদের একজন কোম্পানি অধিনায়কসহ দেড় শতাধিক নিহত ও শতাধিক আহত হন।
এরপর মিত্রবাহিনীর জেনারেল গিল নিয়মিত মুক্তিবাহিনী ও ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক শাফায়াত জামিলের ওপর দায়িত্ব দেন সিলেটের রাধানগর এলাকার ছোটখেল মুক্ত করার। শাফায়াত জামিল সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি নিজেই ওই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেবেন। প্রথাগত সামরিক যুদ্ধে এক কোম্পানি বা তার কম সেনা থাকলে ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক সাধারণ যুদ্ধের ময়দানে যান না। কয়েকজন তাঁকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন। যোদ্ধা হিসেবে গোর্খাদের সুনাম পৃথিবীব্যাপী। ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোর্খা রেজিমেন্ট যা পারেনি, তা বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ সালে সম্ভব করেন। অকৃত্রিম দেশপ্রেম, মমত্ব ও দেশকে শত্রুমুক্ত করার দৃঢ় সংকল্প এবং অন্যদিকে শাফায়াত জামিলের অদম্য ও অটল মনোভাব সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী যোদ্ধায় রূপান্তর করেছিল।
২৭ নভেম্বর গভীর রাতে শুরু হলো সেই ঐতিহাসিক অভিযান। ধানক্ষেতের মধ্য দিয়ে প্রায় ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা এগিয়ে চললেন পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানের দিকে। সবার সামনে শাফায়াত জামিল ও কোম্পানি অধিনায়ক এস আই নূরন্নবী খান। সমরে জয় অথবা মৃত্যু, সম্মুখযুদ্ধে যোদ্ধাদের যে কোনো একটি বেছে নিতে হয়। শাফায়াত জামিলের প্রত্যয় তাই। পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানের কাছাকাছি গিয়ে তিনি অগ্রসর হলেন বাঁ দিক থেকে এবং এস আই নূরন্নবী ডান দিক দিয়ে। ক্ষিপ্রতার সঙ্গে গুলি করতে করতে তাঁরা পাকিস্তানি সেনাদের বিভিন্ন ব্যাংকারের দিকে এগিয়ে চললেন। প্রচণ্ড আক্রমণের তীব্রতায় কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে পালিয়ে গেল। মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই ছোটখেল মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে এল। নিহত হলো অসংখ্য পাকিস্তানি সেনা। কয়েকজন তাদের হাতে ধরা পড়ল। তখনো আশপাশে বিক্ষিপ্ত গোলাগুলি চলছে। চারদিকে মৃত পাকিস্তানি সেনাদের লাশ, অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ভোরের আলোয় শাফায়াত জামিল তদারক করছেন অবস্থান সুদৃঢ় করার কাজ। এমন সময় তাঁর ডান কোমরে গুলি লাগে। ছিটকে পড়েন তিনি, গুরুতর আহত হন। সহযোদ্ধারা তাঁকে ফিল্ড হাসপাতালে পাঠান।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য শাফায়ত জামিলকে বীর বীক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়েছে।
অবসর নেয়ার পর ঢাকার উত্তরায় ৪ নম্বর সেক্টরের ১৪সি সড়কে বসবাস করতেন। তাঁর বাবার নাম এ এইচ এম করিমুল্লাহ। মা লায়লা জোহরা বেগম। স্ত্রী রাশিদা শাফায়াত। তাঁদের তিন ছেলে। শাফায়াত জামিল বলেন, ‘আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। প্রকৃত রাষ্ট্রের যে ধারণা, তা এখনো অর্জন করা হয়নি। পরবর্তী প্রজন্ম তা করবে।’
শাফায়াত জামিল বঙ্গবন্ধুর খুবই আস্থাভাজন ছিলেন। তাঁকে ঢাকায় অবস্থিত ৪৬ বিগ্রেডের কমান্ডিং অফিসারের দায়িত্ব দেয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বঙ্গবন্ধু তার পরিবারসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের কারণে নৃশংসভাবে নিহত হলে শাফায়াত জামিলের পক্ষে তা মেনে নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে তিনি সোচ্চার ছিলেন। মূলত তাঁরই অব্যাহত চাপে পরবর্তী সময়ে ৩ নভেম্বর বিগ্রেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ষড়যন্ত্রের মূল হোতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। বঙ্গভবনে অবরুদ্ধ খন্দকার মোশতাক ও তার সহযোগী সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে শাফায়াত জামিল প্রধান ভূমিকা রাখেন।
দুর্ভাগ্যের বিষয় সেই আলোচিত অভিযান ব্যর্থ হয়। খালেদ মোশাররফসহ কয়েকজন নিহত হন। শাফায়াত জামিলকে কিছুদিন আটক থাকতে হয়। পরে তিনি চাকরিচ্যুত হন। একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যিনি দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন, তিনিই আবার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের শিকার হন তার কিছু সহযোগী সহকর্মীর হাতে। এসব ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তাকে সবচেয়ে বেশি পীড়া দিত বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার-পরিজনদের নৃশংস হত্যাকাণ্ড। তাদের নিরাপত্তা রক্ষার ব্যর্থতাকে তিনি কখনো মেনে নিতে পারতেন না। নভেম্বরে তাদের অভ্যুত্থানের বিপক্ষে যারা পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটায় তাদের ষড়যন্ত্র ছিল আরও ন্যক্কারজনক। এমন রটনা হলো যে, খালেদ-শাফায়াত ভারতপন্থী। দেশের প্রতি যার ভালোবাসা প্রশ্নাতীত সেই শাফায়াতকে এই অপবাদ খুবই পীড়া দিত ও মর্মাহত করত। পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে জীবনবাজি রেখে যারা প্রথম বিদ্রোহ করেছিলেন এবং ১৫ আগস্টের জঘণ্যতম হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়েছিলেন তাদের জন্য এমন অপবাদ অসহনীয় ছিল। এ কারণে পরবর্তীকালে শাফায়াত জামিল অনেকটাই নিভৃতচারী হয়ে পড়ে।
মেজর জেনারেল (অব) মঞ্জুর রশীদ খানের মতে, শাফায়াত জামিল ছিলেন মনে-প্রাণে একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক ও নিবেদিতপ্রাণ সেনা কর্মকর্তা। ব্যক্তিজীবনে ছিলেন অমায়িক, বন্ধুপ্রিয় এবং পরিবারের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত যত্নবান, স্নেহশীল। স্ত্রী রাশিদা শাফায়াত সৈনিক জীবনের শুরু থেকেই তার সুখ-দুঃখের সাথী ছিলেন। শাফায়াত জামিলের সব কর্মকাণ্ডে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
মেজর কামরুল হাসান ভুইয়ার (অব) মতে, শাফায়াত জামিল ছিলেন প্রচারবিমুখ, নিরহংকার, ঋজু এক সৈনিক। মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাস তার পরিধান ছিল লুঙ্গি আর হাফ শার্ট। স্বদেশপ্রেমে ঋদ্ধ, কর্মঠ এই যোদ্ধা ২০১২ সালের ১১ আগস্ট না ফেরার দেশে চলে যান। এ বীর যোদ্ধাকে জাতি সশ্রদ্ধ সালামভরে স্মরণ করবে।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালিউর রহমানের মতে, আইনের প্রতি শাফায়াত জামিল ছিলেন অনুগত ও বিশ্বস্ত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সময় তিনি যদি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কাউন্টার অ্যাটাকের নির্দেশ পেতেন তাহলে আজ বাংলাদেশ ভিন্ন রকম হতো। ১৫ আগস্টের সেনা চক্রান্তের বিরুদ্ধে তৎকালীন স্টাফদের চিফ খালেদ মোশাররফের সঙ্গে তিনি যে অভিযান পরিচালনা করেন তা ৩ নভেম্বর অভ্যুত্থান হিসেবে পরিচিত। ৭ নভেম্বর অভিযান প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হন খালেদ মোশারফ, লে. কর্নেল হায়দারসহ একাধিক কর্মকর্তা নিহত হন। শাফায়াত জামিল বেঁচে যান এবং গ্রেপ্তার হন। ‘একাত্তরের যুদ্ধ’ ও ‘রক্তাক্ত মধ্য আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর’ বইয়ে তিনি লিখে গেছেন ১৯৭৫ সালের সেই সংকটময় সময়ের কথা।
লেখক: সাইফুল হক মোল্লা দুলু, সাংবাদিক