কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান জানান, পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যরা শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে।
তিনি বলেন, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে নজরদারি করবে। এছাড়াও শহরসহ মাঠের প্রবেশ পথগুলোতে থাকছে সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। নামাজ শুরুর আগে পুরো মাঠ মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করা হবে। শোলাকিয়া মাঠ ও শহরের অলিগলিতে বসানো হবে নিরাপত্তা চৌকি। মাঠে প্রবেশ করতে প্রত্যেক মুসুল্লীকে তল্লাশী করা হবে।
এছাড়া ঈদগাহের আশে পাশে প্রতিটি বাড়ীতে তল্লাশী চলছে। নতুন কোন ভাড়াটিয়াকে বাড়ি ভাড়া না দেয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। এবার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যেই মুসুল্লীরা নামাজ আদায় করবেন।
গত ঈদুল ফিতরে রক্তাক্ত জঙ্গি হামলার পরও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল, দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত। তাই এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চলছে ঈদ জামাতের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এবার ১৯০তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে শোলাকিয়ায়। প্রতিবছরের মতো এবারও জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। জামাতে ইমামতি করবেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ।
দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত আয়োজনের তোড়জোড় চলছে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে।
ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পৌরসভা শোলাকিয়ার জামাতকে সফল করতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। জামাতের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখতে জেলা প্রশাসকসহ র্যাব-পুলিশ ও বিজিবির কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ। তারা দফায় দফায় বৈঠকে বসছেন।
এরই মধ্যে মাঠে দাগ কাটা, বালু ফেলা, দেয়ালে রং করাসহ শোলাকিয়া ময়দানকে ঈদের জামাতের উপযোগী করার কাজ শেষ হয়েছে। মুসল্লিদের চলাফেরা নির্বিঘ্ন করতে কিশোরগঞ্জ পৌরসভা নির্মাণ করেছে কয়েকটি নতুন রাস্তা ও একটি সেতু। সংস্কার করা হয়েছে ওজুখানা এবং টয়লেট। চলছে শহরের শোভাবর্ধনের কাজও। প্রস্তুত রাখা হেয়েছে বহুসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক ও কয়েকটি মেডিকেল টিম। দূর-দূরান্তের মুসুল্লিদের যাতায়াতের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় মুসল্লিরা জানান, বছরের পর বছর এ মাঠে নামাজ পড়ে আসছি। গত বছর যারা ইসলামের নামে হামলা করেছিল তারা আসলে ইসলামের শত্রু। এ মাঠে নিরাপত্তা বরাবরই সুন্দর ও সুশৃংখল। আমরা স্থানীয় মুসুল্লিরা এবারও এ মাঠেই ঈদের নামাজ আদায় করব। জেলা প্রশাসক ও ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস জানান, এ বছর ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় ১৯০তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদ জামাত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে আমরা যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আমাদের প্রস্তুতির দু’টি দিক, একটি হচ্ছে মাঠকে জামাতের উপযোগী করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং উন্নয়ন সাধন করা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গত বছর শোলাকিয়া মাঠের নিকটবর্তী পুলিশ চেকপোস্টে সন্ত্রাসীদের হামলাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এ বছর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সব দিক থেকে ঢেলে সাজানো হয়েছে।
রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর আগে শর্টগানের ৬টি ফাঁকা গুলি ছোড়া হবে। জামাত শুরুর ৫ মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি গুলি ছুড়ে নামাজের জন্য মুসল্লিদের সঙ্কেত দেওয়া হবে।
জনশ্রুতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি এক সাথে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত।
সূত্র: বাসস।