আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময় যেভাবে ছাইয়ের আস্তরণ বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে সূর্যকে আড়াল করে দেয় – সেই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে অনুসরণ করে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর উপায় বের করার চেষ্টা চলছে।
তবে আগ্নেয়গিরির ছাই বায়ুমণ্ডলে যতদূর ওঠে – তারও অনেক ওপরে উঠে কৃত্রিম মেঘ তৈরির উপাদান ছড়ানো হবে। এতে করে ঐ আস্তরণ কয়েক বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। বলা হচ্ছে, স্ট্রাটোস্ফিয়ার অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলের সর্বোচ্চ স্তরে ওই কৃত্রিম আস্তরণ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে গবেষণা চলছে।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে জাতিসংঘের একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল অবশ্য সোলার জিও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কার্যকারিতা এবং পরিণাম নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তাদের তৈরি ফাঁস হওয়া একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে – অর্থনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই প্রযুক্তির প্রয়োগ সম্ভব নয়।
কৃত্রিমভাবে জলবায়ু তৈরির ফলে বিশ্বের কিছু কিছু অঞ্চলে অস্বাভাবিক বন্যা, খরা বা অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি দেখা দিতে পারে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন অনেকেই। বায়ুমণ্ডলের অত ওপরে যেতে সক্ষম বিমান আদৌ কবে তৈরি হবে, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর পরিবেশ বিজ্ঞানীরাও এই গবেষণা নিয়ে উদ্বেগ ও সন্দেহ প্রকাশ করে এই প্রক্রিয়ায় তাদের সামিল করার দাবি করেছেন। পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকী নেচারে বাংলাদেশ সহ ১২টি উন্নয়নশীল দেশের পরিবেশ বিজ্ঞানীরা এক যৌথ নিবন্ধে লিখেছেন- “জলবায়ু পরিবর্তন রোধে এই পদ্ধতি যথার্থ কারণেই বিতর্কিত।”
এতে বলা হয়, “আঞ্চলিক পরিবেশের ওপর এর কী প্রভাব হবে তা এখনই বোঝা সম্ভব নয়, এটা দারুণ সুফল বয়ে আনতে পারে আবার সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে”। বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আতিক রহমান, যিনি নেচারের নিবন্ধের অন্যতম একজন লেখক, বিবিসিকে বলেছেন, “আমরা এই গবেষণার বিপক্ষে নই, তবে আমরা চাইছি জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হোক”।
“ভারত বা বাংলাদেশের আকাশে গিয়ে কেউ মেঘ তৈরি করবেন, সেটা তো হতে পারেনা।” “আসল কথা হলো – কে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, বায়ুমণ্ডলে কী উপাদান ছড়ানো হবে, তার প্রতিক্রিয়া কী হবে, কোথায় হবে – এরকম নানা নৈতিক প্রশ্ন যেহেতু এখানে রয়েছে, সুতরাং সবাইকে এর সাথে সংশ্লিষ্ট করতে হবে”।