ইসরাইলের একটি আদালত এক ফিলিস্তিনি আরব কবিকে সহিংসতায় উসকানি দেয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি প্রতিরোধ সংগঠনকে সমর্থন করে মন্তব্য করার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
দারিন তাতুর ২০১৫ সালে সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনটি পোস্ট দিয়েছিলেন। এর মধ্যে একটি ছিল তার নিজের লেখা কবিতা ‘প্রতিরোধ গড়ে তোল, হে আমার জনগণ, তোমরা প্রতিরোধ গড়ে তোল’, যেটি তিনি স্বকন্ঠে আবৃত্তি করে এর সঙ্গে একটি ভিডিও জুড়ে দিয়েছিলেন।
ভিডিওটি ছিল একটি প্রতিবাদে অংশ নেয়া একদল বিক্ষোভকারীর। কবি দারিন তাতুর বলেছেন, তার কবিতাকে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তিনি কখনোই সহিংসতায় উসকানি দেননি। লেখকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন পেন এই রায়ের নিন্দা করেছে। তারা বলেছে, কবি দারিন তাতুরকে তার কবিতা এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের কারণেই টার্গেট করা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে পেন বলেছে, দারিন সেই কাজটাই করেছেন, যেটি লেখকরা প্রতিদিন করেন- আমরা প্রতিদিন আমাদের শব্দ দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ জানাই। ৩৬ বছর বয়সী দারিন তাতুরকে ২০১৫ সালে গ্রেফতার করা হয়। সেসময় তিনি কয়েক মাস জেলে ছিলেন। এরপর ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তাকে গৃহবন্দী করা হয়।
প্রথমে তাকে তেল আবিবের একটি ফ্ল্যাটে আটকে রাখা হয়। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তখন তাকে জননিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বর্ণনা করেছিল। গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় তাকে মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট পর্যন্ত ব্যবহার করতে দেয়া হয়নি। দারিন তাতুরের কবিতার সঙ্গে যে ভিডিওটি রয়েছে, সেটিতে ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে ফিলিস্তিনিদের পাথর ছুঁড়তে দেখা যায়।
কবিতাটির কয়েকটি পংক্তি এরকম, প্রতিরোধ, হে জনতা, প্রতিরোধ কর ওদের/প্রতিরোধ কর দখলদারিদের দস্যুতা/ এবং অনুসরণ কর শহীদদের কাফেলা। ইসরাইলি আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, এই কবিতাটির বিষয়, এটি যে পরিবেশ-পরিস্থিতিতে প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে সহিংসতা এবং সন্ত্রাসবাদী কাজের সমূহ আশংকা তৈরি হয়েছে।
তাতুর অবশ্য বলেছেন, পুরো কবিতাটি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। এখানে সহিংসতার কোনো ডাক নেই। এখানে সংগ্রামের কথা আছে, যাকে কি না সহিংসতা বলে ভুল বোঝানো হচ্ছে। ইসরাইলি সরকারি কৌঁসুলিরা দাবি করছেন, তাতোর আরেকটি কবিতায় ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন, যেটিকে ইসরাইল সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী বলে তালিকাভুক্ত করেছে। তিনি ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদা বা অভ্যুত্থানের প্রতিও সমর্থন জানিয়েছেন।
তার তৃতীয় পোস্টটিতে ছিল ইসরাইলি পুলিশের গুলিতে আহত এক ফিলিস্তিনি মহিলা, যার হাতে ধরা একটি ছুরি। এটির ক্যাপশন ছিল, আমিই পরবর্তী শহীদ। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর কবি দারিন ইসরাইলির একটি সংবাদপত্রকে বলেছেন, আমার বিচার ইসরাইলির মুখোশ খুলে দিয়েছে। সারা বিশ্ব এখন আমার কাহিনী জানবে। তারা জানবে ইসরাইলের গণতন্ত্র আসলে কী। এটি কেবল ইহুদিদের গণতন্ত্র। এখানে আরবরাই শুধু জেলখানায় যায়।
তিনি বলেন, আদালত বলেছে আমি সন্ত্রাসবাদের দোষে দোষী। যদি এটা সন্ত্রাসবাদ হয়, আমি গোটা দুনিয়াকে আমার সন্ত্রাসবাদী ভালোবাসা জানাই।