নদী, পরিবেশ ও সমাজ নিয়ে গভীর ভাবনা তার। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় লক ডাউনের আগে সচেতনতা অভিযানে নেমেছেন তিনি।লকডাউনের পর খুলেছেন করোনা হেল্পলাইন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। বর্তমানএ সমগ্র বিশ্বের কি পরিস্থিতি? স্থানীয় পরিস্থিতিই বা কি? এই সব নিয়ে নরসুন্দা ডট কমের জন্য পশ্চিমবঙ্গ (ভারত) থেকে লিখছেন- লেখক, সাংবাদিক, তুহিন শুভ্র মন্ডল। চোখ রাখুন www.narashunda.com এ। আজ পড়ুন পঞ্চম পর্ব।
হ্যাঁ, হতাশা দিয়েই শুরু করছি লেখাটা। এখনও করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এল না। সমগ্র পৃথিবীর প্রেক্ষাপটেই এটা বলছি। লকডাউন পর্ব কোথাও চলছে তৃতীয় স্টেজ। কোথাও চার সপ্তাহ। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। মৃতের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। হটস্পটের সংখ্যা বাড়ছে বিভিন্ন দেশে। কেমন আছে আমার বিভিন্ন দেশের বন্ধুরা?
বিগত কয়েকদিন ধরেই একথা মনে হচ্ছিল। তাই খোঁজ নিচ্ছিলাম বিভিন্ন দেশে থাকা আমার বন্ধু ও পরিচিতরা কেমন আছে জানতে। তাতে যেটা বুঝলাম যে লকডাউন চলছে বিভিন্ন দেশেই। তবে বোধহয় আমাদের দেশের মতো লকডাউন অমান্য করছেনা কেউ। মেনে চলছে প্রশাসনিক ও সরকারী নির্দেশ।
নাইরোবি, যেখানে রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশ কার্যক্রমের সদর দপ্তর অবস্থিত। সেখানেই আছে আমার বন্ধু পিটার কুনি। কেনিয়াতে লকডাউন চলছে। তার মধ্যেই কেনিয়ার প্রথম রেসপন্ডার পিটার। করোনা পজিটিভ রোগীদের হাসপাতাল নিয়ে যাবার কাজে ও সহযোগিতা করছে। নিজেও স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশেও তো স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে। যদিও সরাসরি তারা চিকিৎসাক্ষেত্রে সেবা দান করছেনা, অন্যান্য ক্ষেত্রে করছে।
স্পেনে আছে আমার বন্ধু স্টিভ লকেট। সেখানে এখন করোনা পরিস্থিতির জন্য লকডাউন চলছে। স্টিভ জানায় স্পেনে চার সপ্তাহ লকডাউন চলছে। আরও দু সপ্তাহ লকডাউন চলবে। স্পেন সরকার তারপরেও আরও দু সপ্তাহ লকডাউনের জন্য ভাবছে। স্টিভ সেখান থেকেই জানালো তারা ভাল আছে। অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন বালুরঘাটের শম্পা দস্তিদার। জানালেন সেখানেও লকডাউন একমাস ধরে চলছে এবং আগামী সেপ্টেম্বর অবধি না হতে পারে। যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠান সেখানে বন্ধ। বাড়ির মাত্র একজন করে অনুমতি পাচ্ছেন মুদিখানা বা বাজারে যাওয়ার। নব্বই শতাংশ মানুষ বাড়ি থেকে কাজ করছে। পড়াশুনা হচ্ছে অনলাইনে।কোন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া, বন্ধু- বান্ধবের দেখা করা বারণ। কোন বিয়ের অনুষ্ঠান না। হলেও, মাত্র চারজন অর্থাৎ বর- কনে- দুই বাড়ির একজন করে। এবং অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দারা সেটা মেনেও চলছে।
আরও পড়তে পারেন- মহামারী করোনা ও গণমাধ্যমকর্মীদের হাহাকার : মাজহার মান্না
আর আমাদের এখানে? একটু চা খেতে, অল্প- স্বল্প বাজার করতে, পরিচিত দের একটু চোখের দেখা দেখতে বেরিয়ে পরছে বাড়ির বাইরে। কি দাঁড়াবে শেষমেষ পরিস্থিতি? উত্তর সময়ের গর্ভে। এবং বলাই বাহুল্য তা অনিশ্চিত।
করোনা আক্রান্ত ও উদ্ভূত পরিস্থিতির ক্ষেত্রে আলোচনায় বারবার উঠে এসেছে আমেরিকার কথা। যারা করোনা ভাইরাসকে প্রথমে অবহেলা করেছিল এবং লকডাউন করেছে অনেক দেরিতে। কিছুদিন আগে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন যে করোনা জনিত মৃত্যুর সংখ্যা একলাখের নীচে রাখতে পারলেই সেটা সফলতা হবে।
আমেরিকায় থাকেন পার্থ ঘোষ। তার কথায় আমেরিকা এখন শ্মশান। প্রায় একমাস ধরে বাড়ি থেকে কাজ করছি এবং বাড়িতে থাকার নির্দেশ। প্রবল শক্তিধর আমেরিকাও পরাজিত এবং পর্যুদস্ত এক অতি ক্ষুদ্র অণুজীব করোনার কাছে।
আমেরিকার মিনেসোটাতে থাকেন জয়িতা ঘোষ। তিনি বলেন ‘আমেরিকায় লকডাউন হয়নি।পুরো দেশে ‘স্টে অ্যাট হোম’ অর্ডার। আর তেমন কিছু স্ট্রিক্ট নয়…
যে দেশে সবচেয়ে প্রথম করোনা ভাইরাস হানা দিয়েছিল সেই চিনের সাংহাইতে থাকেন মিজানুর রহমান সরকার। তার কথায় চীন মোকাবিলা করে ফেলেছে করোনাকে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে সাংহাই সহ সমগ্র চীনের পরিস্থিতি কিন্ত ভারতবর্ষ সহ বাকি বিশ্বের দেশ এখনও আতঙ্কে।
এই সময় একটা কথা সোস্যাল মিডিয়াতে খুব জনপ্রিয় হয়েছে। যে ধর্ম নয় বিজ্ঞানই আমাদের বাঁচাবে। কিন্ত নাইরোবির একটি প্রকৃতিবাদী সংগঠন চিল্ড্রেন উইথ নেচার।তার কর্ণধার ওয়াজিনিকু গিথে হোয়াটস অ্যাপে জানালেন তারা ভগবানের উপরেই ভরসা রাখছেন। আর বলাই বাহুল্য সেই ভগবান আর কেউ নয় এক ও অদ্বিতীয় ‘প্রকৃতি’। আসুন আমরাও তার কাছেই নিজেদের সমর্পন করি।