করোনা তো একদিন বিদায় নেবেই। কিন্তু সেই একদিন টা কবে তার খোঁজেই হন্যে হয়েছে মানুষ। চারমাস অতিক্রান্ত। এখনও আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। মনে পড়ছে ভারতবর্ষে 22 মার্চ প্রথম জনতা কারফিউয়ের কথা। ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টা সম্পর্কে অবগত করেছিলেন। তার আগে চিন, আমেরিকা প্রভৃতি দেশে করোনার খবর আসছিল।
আমাদের কাছে বিষয়টা নতুন। করোনা ভাইরাসের উৎস কি? কোথা থেকে এসেছে ? অন্য দেশের পরিস্থিতি কি? এসবই সামনে আসছিল। তখনও ভাবা যায়নি যে চারমাস পরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না। চারমাস পরেও মানুষ হতাশাচ্ছন্ন থাকবে। পরিস্থিতি অন্ধকারময় থাকবে।কিন্তু বাস্তব এটাই। ভারতবর্ষে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দশ লক্ষ ছাড়িয়েছে। আমি যে শহরে থাকি, যে জেলায় সেখানেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সমগ্র উত্তরবঙ্গ বা রাজ্যেও একই চিত্র।
প্রথম দিকে মানুষ ঘরে থাকার নানান উপায় বের করে একে অপরকে উৎসাহিত করেছে, নিজেও উৎসাহিত হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন পেরিয়ে এখন সে উৎসাহেও কি ভাটা পরে নি? মানুষ খুঁজছে ভ্যাকসিন। এবং তা নিয়ে মাঝেমধ্যেই দেশে ও বিদেশ থেকে নানান আসছে। কিন্ত না, নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হচ্ছে না যে কবে করোনা ভ্যাকসিন আসবে? কবে সবকিছু স্বাভাবিক হবে?
যদিও বেশকিছু দেশে পরিস্থিতি একটু একটু করে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ভারতবর্ষে কিন্তু এখনও সেই অবস্থা আসেনি। যদিও ভারতবর্ষে করোনা থাবা বসিয়েছে অন্য দেশগুলির তুলনায় পরে। করোনার ভয়ংকর পরিস্থিতিতে অন্ধকারতম পথ পেরোতে পেরোতে আমার মনে কিছু প্রশ্ন এসেছে। দেখুন তো আপনাদেরও এমনটা মনে হয় কিনা?
এক) ভারতবর্ষে যেভাবে করোনা মোকাবিলায় লকডাউন ও অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা সঠিক কিনা?
দুই) পরিযায়ী শ্রমিকরা যে যেখানে ছিল সেখানেই থাকা ও খাওয়ার বন্দোবস্ত করে রেখে দিলে করোনার ভয়ংকরতা এতখানি হতো? বাড়ি ফেরার সময় না দিয়ে, তড়িঘরি লকডাউন ঘোষণা করে দেওয়াটা কি উচিত হয়েছে? শ্রমিক দের এই ভয়ংকর অবস্থার জন্য দায়ি কে?
তিন) যারা করোনা যুদ্ধে সামনে থেকে লড়ছে তাদের সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থাপনা নিতে এত দেরি হল কেন? এখনও বা এত অপর্যাপ্ত কেন?
চার)একেবারে প্রথম অবস্থায় আন্তর্জাতিক উড়ান গুলি বন্ধ করে দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ হত না? বা আক্রান্তের সংখ্যা কমতো না?
পাঁচ) সরকার ও প্রশাসন থেকে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা পালনে, সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে মানুষ কি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে? এবং ছয়)করোনার ভয়াবহতা পেরিয়ে একদিন তো স্বাভাবিক হবে সব। এই সময় অল্পতে জীবন চালানোর অভ্যস্ত আমরা, প্রকৃতির গুরুত্ব শিখতে শেখা আমরা কি করোনা পরবর্তী পৃথিবীতেও এমন থাকবো?
ঠিক এই জায়গা থেকেই মনে হচ্ছে যে করোনা পর্ব চলে গেলে আমরা আবার জীবনের বেপরোয়া গতিতে ছুটবো।অর্থনীতির দিকে তাকাতে গিয়ে প্রকৃতির কথা ভাববে না কেউ। আর আমরা আবার ভুলে যাবো আমাদের যাবতীয় সুঅভ্যাস। এমনটা ভাবতে মন চায় না।কিন্তু কেন যেন এমনটাই মনে হচ্ছে! আমি আশাবাদী।এবং তেমনই থাকতে চাই।কিন্তু …….। আপনাদের কি মনে হয়?
তুহিন শুভ্র মন্ডল : লেখক, পরিবেশকর্মী, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।