মানুষ- সমাজ

রতনতনু ঘোষ এবং লেখকের সম্মান

নরসুন্দা ডটকম   অক্টোবর ৫, ২০১৬

নরসুন্দা ডটকম রিপোর্ট:

সদ্য প্রয়াত লেখক, অধ্যাপক রতনতনু ঘোষের মৃত্যুতে একজন লেখকের মৃত্যু পরবর্তী সময়ে প্রাপ্ত সম্মান নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তৈরী হয়েছে। বিশেষ করে কি পরিমান যোগ্যতা অর্জন করলে একজন লেখক বাংলা একাডেমির কাছ থেকে তার প্রাপ্য সম্মাটুকু পেতে পারেন। একই সাথে প্রশ্ন উঠেছে বাংলা একাডেমি প্রশাসনের যোগ্যতা নিয়েও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে চলছে এনিয়ে ব্যাপক আলোচনা- সমালোচনা।

ঘটনার সূত্রপাত বিশিষ্ট লেখক, কলামিস্ট ও সহযোগী অধ্যাপক রতনতনু ঘোষের মরদেহ বাংলা একাডেমিতে প্রবেশে অনুমতি না দেয়ায়। তাঁকে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনে জন্য পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে তার মরদেহ বাংলা একাডেমির উদ্দেশ্যে নিয়ে আসা হলেও একাডেমির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মো. আনোয়ার হোসেনের নির্দেশে একাডেমির ভিতরে তার মরদেহ প্রবেশে বাঁধা দেওয়া হয়।

কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর  প্রয়াত রতনতনুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার ফেইসবুক স্টেটাসে বলেন-“প্রয়াত রতনতনু ঘোষ অধ্যাপনা করতেন, ৭২টি গ্রন্থের তিনি প্রণেতা, ছিলেন বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য এবং বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্পের পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক। সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রতনতনু ঘোষের মরদেহ বাংলা একাডেমিতে প্রবেশে অনুমতি দেয়নি কর্তৃপক্ষ।“আচ্ছা, রতনতনুকে নিয়ে সমস্যাটা কি? তিনি আওয়ামী লীগার কী না- সে ব্যাপারে বাংলা একাডেমির সংশয় ছিলো? বাই দ্যা ওয়ে, এখন তো আবার বাঙালী মুসলমান না মুসলমান বাঙালীর যুগ। এই ভূত কি বাংলা একাডেমিতেও আছে- যারা ‘হিন্দু বাঙালী’ রতনতনুর শবদেহকে গেটে আটকে দিয়েছে। ।

কবি ও লেখক সাখাওয়াত টিপু  তার স্টেটাসে বলেন, বিষয়টি বেশ নির্মম! সাহিত্য মানুষকে মানবিক বোধ দেয়। কিন্তু লেখক রতনের লাশ নিয়ে বাংলা একাডেমি সংশ্লিষ্টদের অমানবিক আচরণ, এমন নির্মমতা, গোটা সমাজের জন্য ভয়ানক। কি এমন ক্ষতি হতো তার লাশটা বাংলা একাডেমিতে রাখলে?

কবি রন্জু রাইম  বলেন-রতনতনু ঘোষ বিশিষ্ট লেখক নন, এই বিবেচনায় তার লাশ বাংলা একাডেমিতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ২৫ বছর অধ্যাপনা করেছেন, ৮০টি বইয়ের লেখক, বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য, বাংলা একাডেমি থেকে প্রবন্ধে তরুণ লেখক প্রকল্প পুরস্কার প্রাপ্ত, বাংলা একাডেমি থেকে যার বই প্রকাশিত হয়েছে, সেই রতনতনু ঘোষ বাংলা একাডেমির বিবেচনায় বিশিষ্ট নন। কথা হচ্ছে, কোন লেজবিশিষ্টরা বাংলা একাডেমির বিবেচনায় বিশিষ্ট।

ইতিপূর্বে বাংলা একাডেমির বিভিন্ন কর্মকান্ডের সমালোচনা হলেও এবারের বিষয়টি পরবর্তী সময়ের জন্য একটি বাজে উদাহারণ হয়ে থাকবে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

ababc

উল্লেখ্য যে, গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে লেখক রতনতনু ঘোষ তেজগাঁও শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫২ বছর। তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে লেখালেখি করেছেন। কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস রচনার পাশাপাশি তিনি দৈনিক পত্রিকাগুলোতে নিয়মিত কলাম লিখতেন।

এছাড়াও তিনি মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে শিক্ষকতা করছিলেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ অগ্রসর বাংলাদেশ, অপরাজেয় বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সাহিত্য, নোবেলবিজয়ীদের কথা, বাংলাদেশের রাজনীতি প্রত্যাশা ও বাস্তবতা, ভাষা আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি ও উত্তরাধুনিকতা। এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭২টি বলে জানা গেছে।

ছবি: লেখক রতনতনু ঘোষের ব্লগ থেকে সংগ্রহ।

 

 

 

 

 

About the author

নরসুন্দা ডটকম

Leave a Comment