নরসুন্দা ডটকম ডেস্ক:

দীর্ঘ ও বর্ণময় রাজনৈতিক জীবনের একটা অধ্যায় শেষ হয়ে গিয়েছিল রাষ্ট্রপতি হওয়ার সময়েই। তখন ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলতেন, প্রাত্যহিক রাজনৈতিক উত্তেজনাকে ‘মিস’ করছেন। এ বার রাষ্ট্রপতি ভবনকে বিদায় জানিয়ে নতুন ঠিকানায় যাওয়ার জন্য কিন্তু মানসিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। সাড়ে চার দশক ধরে কোনও ফাইল বা সঙ্কটমোচন বৈঠক ছাড়া যাঁকে কখনও ভাবা যেত না, সেই তিনি-ই এখন নিঃশব্দে প্রস্তুতি নিচ্ছেন— দীর্ঘ অবসর নেওয়ার!

নতুন ঠিকানা, ৩৪ নম্বর এপিজে আব্দুল কালাম রোড। লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার পূর্ণ সাংমা থাকতেন যে টাইপ-৮ বাংলোটিতে, সেটিই আপাতত নির্ধারিত হয়েছে প্রণববাবুর জন্য। জুলাইয়ে রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে তাঁর। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, দিল্লিতে টাইপ-৮ বাংলো খুব বেশি নেই। এখন এই বাংলোয় সাংমার পরিবার থাকেন। নগরোন্নয়ন মন্ত্রক থেকে তাঁদের অনুরোধ করা হয়েছে, ওই বাংলোটি যেন তাঁরা খালি করে দেন। এখনও প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মেয়াদের অনেকটাই বাকি। ফলে তিনি যদি চান, তা হলে তাঁর পছন্দ অনুযায়ী বাংলোটির সংস্কার করা যেতে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত সে রকম কোনও অনুরোধ রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে আসেনি বলে জানিয়েছে মন্ত্রক।

রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, নগরোন্নয়ন মন্ত্রক তথা কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগের ফলে দু’টি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রথমত, এর পরের বার রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী হচ্ছেন না প্রণব মুখোপাধ্যায়। সরকারও তাঁকে দ্বিতীয় বারের জন্য মনোনয়নের কথা ভাবছে না। তিনি নিজেও বিরোধীদের সমর্থন নিয়ে এই পদে লড়ার কথা ভাবছেন না। বেশ কিছু দিন আগেই ঘনিষ্ঠমহলে প্রণববাবু স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি দ্বিতীয় বারের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে লড়বেন না। দ্বিতীয়ত, অবসরের পর কলকাতা বা অন্য কোথাও নয়, দিল্লিতেই থাকতে চান তিনি। রাষ্ট্রপতির পেনশন আইনে বলা আছে, ভারতের যে কোনও জায়গায় বাংলো পেতে পারেন অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি। কোথায় থাকবেন সেটা তাঁর উপর নির্ভর করছে। প্রণববাবু বরাবরই দিল্লির ক্ষমতার অলিন্দে স্বচ্ছন্দ। তাই অবসরের পরেও তিনি দিল্লিতে থাকতেই পছন্দ করবেন, মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

নতুন বাড়িতে রাষ্ট্রপতি ভবনে ব্যবহার করা প্রায় কোনও কিছুই নিয়ে যেতে চান না প্রণববাবু। বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া উপহার সবই থাকবে ভবনের নবনির্মিত সংগ্রহশালায়। গত চার বছরে যত বই উপহার পেয়েছেন তার বেশিটাই দিয়ে যাবেন ভবনের গ্রন্থাগারে। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সংগ্রহের প্রিয় বইগুলোই তিনি নিয়ে যেতে চান।

নোট: লেখা আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে নেয়া।