শিল্প- সংস্কৃতি

বিশ্বের ১০,০০০ হলে একদিনে মুক্তি পাচ্ছে রজনীকান্তের ছবি ২.০

নরসুন্দা ডটকম   নভেম্বর ২৯, ২০১৮

বিশ্বের প্রায় দশ হাজার সিনেমা হলে আজ ২৯শে নভেম্বর, বৃহস্পতিবার মুক্তি পাচ্ছে ২.০ নামের একটি ভারতীয় চলচ্চিত্র। তামিল, তেলেগু, হিন্দি এবং আরো বহু ভাষায় এই সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছে।

এই ছবিতে অভিনয় করেছেন রজনীকান্ত ও অকশয় কুমার।

গত কয়েকদিন ধরে ছবিটি নিয়ে এতো বেশি আলোড়ন তৈরি হয়েছে যে ধারণা করা হচ্ছে ভারতে সর্বকালের ইতিহাসে এটিই হবে সবচেয়ে ব্যবসা সফল ছবি।

রজনীকান্তের জনপ্রিয়তা শুধু তামিলনাডু ও দক্ষিণ ভারতের মধ্যেই সীমিত নেই। বরং তার এই জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছে উত্তর ভারত থেকে শুরু করে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো আরো কিছু দেশেও।

গত ৩০ বছর ধরে তামিল চলচ্চিত্র জগতের পর্দা কাঁপাচ্ছেন রজনীকান্ত, যিনি তার ভক্তদের কাছে রজনী হিসেবেই অনেক বেশি পরিচিত।

উত্তর ভারতেও রয়েছে তার বহু ভক্ত। চলচ্চিত্র সমালোচকদের মতে সব বয়সের দর্শকই তার ছবি দেখতে ভালোবাসেন।

বিশ্বের ১০,০০০ হলে মুক্তি পাচ্ছে রজনীকান্তের ছবি ২.০

কিন্তু কিভাবে তিনি তার এই ইমেজ তৈরি করলেন?

ভারতের প্রখ্যাত একজন চলচ্চিত্র সমালোচক স্যারা সুব্রাম্যানিয়াম বলছেন, “১৯৮০ ও ১৯৯০ এর দশকে ভারতীয় তরুণদের কাছে সিনেমা ও ক্রিকেটের মতো খুব কম বিষয়ই ছিল যাতে তারা আকৃষ্ট হতে পারতো। ভারতীয় সিনেমায় সুপার হিরোর যে শূন্যতা ছিল রজনী সেটা পূরণ করতে পেরেছিলেন।”

“ছবি মুক্তি পাওয়ার প্রথম দিনের প্রথম শোতে রজনীর ছবি দেখতে পারার বিষয়টা একটা দারুণ উত্তেজনার ব্যাপার। সেখানকার পরিবেশটাই থাকে অন্যরকমের।”

তিনি বলেন, “লোকজন তার সিনেমা দেখতে ভালোবাসেন তার আরো একটা কারণ হচ্ছে তিনি যেভাবে সংলাপ ছুঁড়ে দেন সেটা। এই কাজটা তিনি যেভাবে ও যতোটা দক্ষতার সাথে করতে পেরেছেন সেরকম আর কেউ করতে পারেনি।”

“তার শরীরের ভাষাও অন্যদের চেয়ে আলাদা এবং এটা তার একেবারে নিজস্ব একটি স্টাইল। একারণে তামিলনাডুকে তার প্রচুর ভক্ত তৈরি হয়েছে। এর মাধ্যমে ভাষার সীমানা অতিক্রম করে তিনি পৌঁছে গেছেন দেশের অন্যান্য প্রান্তে অন্যান্য ভাষার মানুষের কাছেও,” বলেন সুব্রাম্যানিয়াম।

সমালোচকরা বলেন, অভিনয়ের সময় রজনী তার শরীরকে এমনভাবে ব্যবহার করতে পারেন যেটা তাকে আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। তার এই বডি ল্যাঙ্গুয়েজকে বলা হচ্ছে, ‘রজনী স্টাইল’, যা শিশুরাও নকল করতে উৎসাহ বোধ করে।

চলচ্চিত্র সমালোচকরা বলছেন, কিছু কিছু ছবিতে তার অভিনয় অবিশ্বাস্য রকমের। এজন্যে তাকে “নায়কদেরও নায়ক” বলা হয়।

বলিউড এবং টলিউডের অনেক তারকাও রজনীর ভক্ত।

আরো পড়ুন…

‘দি ডিরেক্টর’: ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি দেওয়া হবে

শাহরুখ খান তার ‘লুঙ্গি ড্যান্স’ গানটি উৎসর্গ করেছেন রজনীকান্তকে। শুধু ব্যবসায়িক সাফল্যের উদ্দেশ্যে তিনি এটা করেন নি। তার জনপ্রিয়তার কথা চিন্তা করেই শাহরুখ খান সেটা করেছিলেন বলে বলছেন স্যারা সুব্রাম্যানিয়াম।

তবে তিনি এও বলেছেন, রাজনীতিতে যোগ দেওয়া এবং তার কিছু কিছু বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে রজনীর ভক্তরা তাকে আগের চোখেই দেখে কিনা সেটা নিয়ে একটা সন্দেহ আছে। “ভক্তরা তার এসব কথাবার্তা পছন্দ করে কিনা সেটা খুব একটা পরিষ্কার নয়।”

তিনি বলেছেন, “ভারতের অন্যত্র এবং বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় ২.০ ছবিটি নিয়ে প্রচুর কথাবার্তা হলেও তামিলনাডুতে ছবিটি দেখার জন্যে সেরকম প্রিবুকিং চোখে পড়েনি। সোশাল মিডিয়াতেও সেরকম কিছু হয়নি।”

রজনীকান্তের পরবর্তী ছবি পেত্তা পরিচালনা করবেন যে তরুণ পরিচালক কার্তিক সুব্বুরাজ, তিনি মন্তব্য করেছেন, “রজনীকে নিয়ে ছবি বানানো আমার একটা স্বপ্ন। আরো অনেকের মতো আমিও তার ছবি দেখে বড় হয়েছি।”

“তিনি যে ভারতে বড় বড় তারকাদের একজন সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। বহু বহু বছর ধরেই তিনি দর্শকদেরকে তার যাদু দেখিয়ে চলেছেন। তার নিজস্ব স্টাইল, ম্যানারিজম, সংলাপ এসবই তার ভক্তদেরকে মুগ্ধ করছে।”

তিনি বলছেন, তার মতো আরো একজনকে খুঁজে পাওয়া কঠিন যিনি এতো দিন ধরে জনপ্রিয়তার ধরে রাখতে পেরেছেন। “এই যশ ও খ্যাতির বাইরেও তিনি একজন সাধারণ মানুষ।”

অন্ধ্র প্রদেশ এবং তেলেঙ্গানাতে তিনি অনেক জনপ্রিয়। তামিল ভাষায় তৈরি তার বহু ছবি তেলেগু ভাষায় অনুবাদ হওয়ার পর সেগুলোও প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

শুধু ভারতেই নয়, মালয়েশিয়া এবং জাপানেও তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।

চলচ্চিত্র সমালোচকরা বলছেন, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসী তামিলদের কারণে সেসব দেশে তার জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

অারো পড়তে পারেন…

আবার এক হচ্ছেন হৃতিক-সুজান!

‘বিসর্জন’ ছবির সিক্যুয়েল ‘বিজয়া’র পোস্টার উদ্বোধন

রজনীকান্তের জন্মনাম শিবাজী রাও গায়কবাড়। তার জন্ম ১২ই ডিসেম্বর, ১৯৫০ সালে। একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং সাংস্কৃতিক প্রতীক। তিনি চলচ্চিত্র জগতে অভিষেক করেন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত তামিল সিনেমা অপূর্ব রাগাঙ্গাল (১৯৭৫) এ অভিনয়ের মাধ্যমে, এই সিনেমার পরিচালক কে.বলচন্দ্র, যার উপদেশে তিনি সিনেমাতে অভিনয় করেন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্রসহ অন্যান্য দেশের সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন। ভারতীয় শহর বেঙ্গালুরুতে বেড়ে উঠেন, রজনীকান্ত অসচ্ছল জীবনের সাথে লড়াই করে কাটিয়েছেন তার শৈশব। বেঙ্গালুরু মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের বাসের সহকারী হিসেবে কাজ করা অবস্থায় তিনি নাটকে অভিনয় করতেন। তিনি ১৯৭৩ সালে মাদ্রাজ আসেন “মাদ্রাজ ফিল্ম ইনিস্টিটিউট” থেকে অভিনয়ের উপর ডিপ্লোমা পড়ার জন্য। তামিল চলচ্চিত্রে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে করতে রজনীকান্ত একসময় অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর থেকে, ভারতীয় জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে তিনি “ অভিনয় দেবতা” হিসেবে জনপ্রিয় হন। সিনেমায় তার আচরণ এবং সংলাপের ধরন তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। “শিবাজী” সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি ₹২৬০ মিলিয়ন (US$৫.১৯ মিলিয়ন) সম্মানী নেওয়ার পর তিনি জ্যাকি চ্যানের পর এশিয়ার সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক গ্রহণকারী তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

About the author

নরসুন্দা ডটকম