মানুষ- সমাজ

সারা বছর ছোটখাটো অপরাধকে জরিমানা করা প্রয়োজন ।। এম জে এইচ বাতেন

নরসুন্দা ডটকম   এপ্রিল ২৯, ২০২০
জরিমানা

বাংলাদেশ তথা সমগ্র বিশ্বের মানুষ প্রাণঘাতী করোনা মহামারির ভয়াল থাবা থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য এখন অনির্দিষ্ট কালের জন্য ঘরে আবদ্ধ জীবন কাটাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞ ও মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ মানুষ বিভিন্ন কারণে মানসিক চাপের মধ্যে দিন পার করছেন।

শুরুতে বাংলাদেশে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন করা হলেও পরবর্তীতে তা কয়েক দফায় বাড়ানো হয়। বাংলাদেশে গত ২৬ মার্চ থেকে অঘোষিত লকডাউন চলছে, যা আগামী ৫ মে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আকাশ, নৌ, সড়ক ও রেলসহ সকল প্রকার যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। জরুরি জিনিসপত্রের প্রতিষ্ঠান ব্যতীত সকল প্রকার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, কলকারখানাও বন্ধ রয়েছে।

করোনা ভাইরাস বর্তমানে একটি বৈশ্বিক সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। সারা বিশ্বে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যেমন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে সাথে সাথে অসংখ্য মানুষ হারাচ্ছে প্রাণ। বাংলাদেশেও সংক্রমণ প্রতিদিন বাড়ছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। যেহেতু এর কোন সুনিদিষ্ট চিকিৎসা নাই তাই শারিরিক দুরত্ব নিশ্চিত করাই সংক্রমণ প্রতিরোধের কার্যকর উপায়।

আমাদের দেশে করোনা সংক্রমণের প্রথম সাপ্তাহ সাধারণ মানুষকে ঘরে থাকার জন্য বিভিন্ন ভাবে আইন শৃংঙ্খালা বাহিনী সরাসরি সচেতন করেছেন।দুই-তিন দিন মানুষ ঘরে থাকলেও পরে বিভিন্ন অজুহাতে ঘর থেকে বের হচ্ছে। সরকার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন জায়গায় লক ডাউনসহ কঠোর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। অর্থ জরিমানা করার পরও জনগণের অসচেতনতা ও উদাসীনতা মনোভাব চোখে পরার মত। মানুষ এখন আইনশৃংঙ্খালা বাহিনীর সাথে লুকোচুরি খেলায় মেতে উঠেছেন। দোকানপাট বন্ধ রাখার কথা থাকলেও বাস্তবে দেখা যায় একজন দোকানের ভিতরে বেচাকেনা করে অন্যজন পাহারা দেয় বাহিরে আইন শৃংঙ্খলাবাহিনীর গাড়ি আসে কিনা, কেউ আবার দেখা যায় দোকান অল্প একটুকু খোলা রেখে বাইরে বসে বেচাকেনা করছেন।

আরও পড়তে পারেন….

সব ঝুট হ্যায় ।। অতনু রায়

দান ।। সুদীপ ঘোষাল

আগে রাস্তাঘাট, আবর্জনা, ড্রেইনের উপর চলত চা খাওয়ার ধুম এখন চলছে নিরবে। গণমাধ্যম সারাদিন প্রচার করছেন ঘর থেকে বাহির হলে মাস্ক ব্যবহার করার জন্য মানুষ এখনো অনেকে মাস্ক ব্যবহার করছেন না এমকি যারা মাস্ক ব্যবহার করছেন তাও নাক মুখের বাইরে, জিজ্ঞাস করলে বলে মাস্ক ব্যবহার করতে চাই না কিন্তু পুলিশ যদি দেখে ফেলে তাহলে শাস্তি দেবে তাই সাথে রাখছি কেউ আবার ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে সরকারের আইন অমান্য করছেন।

শহরের মসজিদগুলোতে সরকারের নির্দশনা মেনে নামাজ আদায় করলেও গ্রামে তার উল্টো চিত্র। মসজিদে না এসে ঘরে নামাজ পড়ার পক্ষে জনগণ খুবই কম, এমনকি বড় আলেম ও ঈমাম সাহেবের কথা মানছে না মানুষজন। সরকার ছুটি ঘোষণার পর লঞ্চঘাটে, রেলস্টেনে,বাস টার্মিনাল আমরা যেভাবে ট্রাকে বাড়ি ফিরেছি তাতে নিজেরা কতটা অসচেতনতার পরিচয় দিয়েছি তার হিসাব কে করবে।

ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানে করে পর্যন্ত মানুষ ফিরেছে দলে দলে। মাঠে পুলিশ র‌্যাব, সেনাবাহিনী থাকার পরও। মানুষ আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর টহল গাড়ী দেখলে দৌঁড় আবার তারা চলে গেলে দল বেঁধে অলিগলিতে আড্ডা জমাছে। যেখানে উন্নত রাষ্ট্রগুলো করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমাদের দেশের অবস্থা কতটা ভয়বহ হতে পারে তা হয়ত আমরা এখনো বুঝতে সক্ষম হইনি।

আসলে মানুষ কেন আইন মানছে না? শুধু করোনা ভাইরাসের সময় নয় সব সময় এদেশের মানুষের আইন মানার প্রবণতা খুবই কম। এর জন্য দায়ী মুলত শিক্ষার হার কম, সামাজিক মূল্যবোধ,দারিদ্রতা, অপরিকল্পিত নগরায়ন যেমন কারণ হিসেবে বিবেচিত তেমনি সরকারের জবাবদিহিতা, আইনের অনুশাসন, দুর্নীতি, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, নাগরিক অধিকার এসব বিষয় জড়িত। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে পুলিশ যে কোন সময় আইন ভঙ্গকারীর বিরোদ্ধে তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ নিতে পারে না।

যেমন শহরে ফুটপাতে যখন বাজার বসে পুলিশ সেই রাস্তা দিয়ে সারাদিন চলাচল করলেও কোন পদক্ষেপ নেয় না। অনেক সময় যানযট হয় অবৈধ পার্কিং কারণে কিন্তু পুলিশ ও সেই যানযটে আটকা থাকে কিন্তু সাথে সাথে কোন জরিমানা বা কোন শাস্তি দিতে দেখা যায় না। পুলিশ যদি মানুষ অপরাধ করা মাত্রই জরিমানা করত তাহলে সরকারি আইন অমান্য করে হাজার হাজার মানুষ জানাযায় শরিক হতে সাহস পেত না।

পুলিশ যদি ছোটখাটো অপরাধকে সামাল দিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে সাথে নিয়ে নিয়মিতভাবে জরিমানা করে তাহলে মানুষকে আইন মানতে বাধ্য করা অসম্ভব। বড় ধরনের জেল জরিমানর জন্য ম্যাজিস্ট্রেট মাসে চার থেকে পাচঁবার আর পুলিশ প্রতিদিন ছোটখাটো অপরাধের জন্য অর্থ জরিমানার শাস্তি দিতে থাকলে একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে অন্যদিকে মানুষ এমনিতেই আইন মানতে শুরু করবে। এর জন্য দরকার প্রতিদিন পুলিশ টহল জোরদার করা, পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো। আমাদের দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ লোক দেশের বাইরে গিয়ে অন্য দেশের আইন মেনে চলতে পারে তাহলে এ দেশে কেন পারবে না ? যদি প্রশাসন সঠিকভাবে অর্থ জরিমানার আইন প্রয়োগ করে, অবশ্যই একদিন বাংলাদেশের মানুষ উন্নত দেশের মানুষের মত আইন মানবে।

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

এম জে এইচ বাতেন : সমাজ উন্নয়ন কর্মী, কিশোরগঞ্জ।

About the author

নরসুন্দা ডটকম