সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
বাংলা সাহিত্যের এ বরেণ্য লেখক ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সৈয়দ হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম মহকুমায় (বর্তমানে জেলা) এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।
তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে ‘সৈয়দ হক : কবিতায় অঞ্জলি’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব, কবিতা আবৃত্তি এবং নাট্যপরিবেশনা। গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন পিয়াস মজিদ, প্রকাশ করেছে অনিন্দ্য প্রকাশ। গ্রন্থটি কবি শঙ্খ ঘোষ, কবীর চৌধুরী, আসাদ চৌধুরী, মহাদেব সাহাসহ দুই বাংলার দেড় শতাধিক কবির সৈয়দ হককে নিবেদিত কবিতার সংকলন। পরে জাতীয় নাট্যশালায় থিয়েটার মঞ্চায়ন করবে সৈয়দ শামসুল হক রচিত আবদুল্লাহ আল-মামুনের নির্দেশনায় নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়।’
অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ ও আলোচনা রয়েছে। পরে শিল্পকলা একাডেমি মঞ্চায়ন করবে সৈয়দ শামসুল হক রূপান্তরিত এবং আতাউর রহমান নির্দেশিত নাটক ‘হ্যামলেট’।
আরো পড়তে পারেন…
বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামে-আন্দোলনে বিশ্বস্ত : মেহের আফরোজ চুমকি
২০১৬ সালের এপ্রিলে সৈয়দ শামসুল হকের ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। লন্ডনের রয়্যাল মার্সডেন হাসপাতালে তিনি পাঁচ মাস চিকিৎসা নেন। ২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। একই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার ইচ্ছা অনুযায়ী জন্মভূমি কুড়িগ্রামে সরকারি কলেজের পাশে তার লাশ দাফন করা হয়। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও তিনি লিখেছেন কবিতার পর কবিতা, ছোটগল্প। বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সম্ভার হ্যামলেট অনুবাদ করেছেন।
সাহিত্যের সব ক্ষেত্রে সদর্প বিচরণকারী সৈয়দ হক ৮১ বছর (জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর, মৃত্যু ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর) বেঁচেছিলেন।
এ দীর্ঘ সময়ে তিনি দু’হাত ভরে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ও গান লিখেছেন। বাংলা সাহিত্যকে তিনি সমৃদ্ধ করে গেছেন। ১৯৫৪ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘তাস’ প্রকাশ হয়। এরপর একে একে ‘শীত বিকেল’, ‘রক্ত গোলাপ’, ‘আনন্দের মৃত্যু’, ‘প্রাচীন বংশের নিঃস্ব সন্তান’, ‘জলেশ্বরীর গল্পগুলো’ নানা বিষয়ে গভীর জীবনঘনিষ্ঠ রচনা প্রকাশিত হয়।
১৯৫৯ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘এক মহিলার ছবি’ প্রকাশিত হয়। ১৯৬১ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একদা এক রাজ্যে’ প্রকাশিত হয়। ‘বিরতিহীন উৎসব’, ‘অপর পুরুষ’, ‘বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তিমালা’, ‘পরানের গহীন ভিতর’সহ বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থ পাঠকের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। তার লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- ‘নীল দংশন’, ‘খেলারাম খেলে যা’, ‘বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ’, ‘তুমি সেই তরবারি’, ‘নিষিদ্ধ লোবান’, ‘দ্বিতীয় দিনের কাহিনী’ অন্যতম। তার অতুলনীয় কাব্যনাট্য ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘নূরলদীনের সারাজীবন’, ‘ঈর্ষা’, ‘গণনায়ক’ ইত্যাদি।