মাজহার মান্না >> মানুষ নানা প্রাণীকে বন্দী করে রেখেছে চিরকাল। আজ ওই প্রাণীরই কারণে মানুষ বন্দী আপন ঘরে। ২০১৯ সালের শেষে চীনের হুবে প্রদেশের অন্তর্গত উহান শহরের এক বন্যপ্রাণীর (বাদুড় বা কোন সরীসৃপ) বাজার থেকে করোনাভাইরাস মানবদেহে সংক্রমিত হয়েছে।
এর অভিঘাতে গোটা পৃথিবী এখন বিপর্যস্ত। ভবিষ্যতে আরও ভয়ঙ্কর সময়ের আগামী শোনা যাচ্ছে। দীর্ঘকাল মানুষ প্রকৃতিকে তোয়াক্কা করেনি। তারা নিজের আগ্রাসী সাধ মিটিয়েছে প্রকৃতিকে ব্যবহারের মাধ্যমে। পাহাড় জঙ্গল কেটে উজাড় করেছে, নদী ভরাট করে প্রাসাদ গড়েছে। এখন সুদে-আসলে প্রকৃতির প্রতি অন্যায়ের দেনা শুধবার সময় এসেছে।
দেশে দেশে লকডাউন। জরুরি অবস্থা। কারফিউ। করোনার ছোবলে আমাদের চেনা পরিবেশকে পাল্টে দিয়েছে। বর্তমান সময়ে ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এই মানবিক মূল্যবোধ অনেকের মধ্যেই জাগ্রত হয়েছে। আবার দুস্থ মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে খাওয়ার মতো ঘৃণ্য অনেক মানসিকতার মানুষকে গোটা জাতি নতুন করে চিনতে পেরেছে। এ অবস্থায় সমাজে এমনতর অনেক পরিশীলিত-রুচিশীল মানুষ আছেন, হয়তো তাদের জন্যই সমাজে কিছুটা হলেও ভারসাম্য বিরাজমান।
করোনায় অনেকেই বুঝে উঠতে পারছেন না। তাদের বলব, আবেগ দিয়ে না দেখে মেধা দিয়ে চিন্তা করুন। আমরা মেধা দিয়ে চিন্তা করলে আামদের দেশটাকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। ভয়কে জয় করুন।
চিকিৎসকদের অভিমত, দেশের এমন পরিস্থিতিতে অযথা আতঙ্কিত হবেন না। যারা বাড়ি থেকে দূরে রয়েছেন, তারাও মানসিক চাপে ভুগতে পারেন। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। কারণ মানসিক উদ্বেগ বা চিন্তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমিয়ে দেয়। ফলে এ সময়ে ঘনঘন অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।
করোনাভাইরাসের কারণে সরকারি ঘোষনা বা বিধিনিষেধ প্রত্যাহার না হলেও সাম্প্রতিক সময়ে সবকিছু যেন এমনি এমনি স্বাভাবিক হতে চলেছে। করোনা আতঙ্ক উপেক্ষা করে আরও সরগরম হতে শুরু করেছে জেলা ও উপজেলা শহরসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল। যেন করোনা মহামারী থেকে বাঁচানোর সাধ্য কারো নেই। সরকারে নির্দেশনা মানাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিও যেন আগের মতো খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্য বিশেষষ্ণদের অভিমত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়িয়ে সরকারি বিধিনিষেধ পালনে মানুষকে বাধ্য করতে হবে। সবকিছু ঢিলেঢালা হয়ে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে। এতে বাড়তে পারে করোনার রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। বিশ্বের অনেক দেশ আছে যারা লকডাউন শিথিল করে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ফের কঠোর হতে হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে ‘ঘরে থাকি সুস্থ থাকি’ স্লোগানে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষ এ বিষয়ে অসচেতন। তাই দেশের মানুষকে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে সবাইকে নিজ নিজ এলাকায় কাজ করতে হবে। বলতে হবে-জানাতে হবে করোনাভাইরাস একটি মারাত্মক সংক্রমণ রোগ তাই প্রতিরোধ ও প্রতিকারে নির্দেশনা মেনে চলুন।
অন্য ব্যক্তি হতে তিন ফিট সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন। কেননা এ ভাইরাস যে কোন বয়সের মানুষের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। আর তাই ঘরে থাকুন অতি জরুরি না হলে বাহিরে বের হবেন না। মনে রাখবেন আপনার সুরক্ষা আপনারই হাতে।
সবশেষে প্রত্যাশা নিয়ে বলব, প্রতিদিন ঘুমাতে যান সুন্দর একটি ভোরের স্বপ্ন নিয়ে। ঘুম থেকে উঠে শুনবেন বাংলাদেশ থেকে করোনা বিদায় নিয়েছে। সেই সকালের অপেক্ষায় থাকুন।