মানুষ- সমাজ

ঘাতক কভিড-১৯ ও একটি বারোয়ারি উপাখ্যান : আফজল হোসেন আজম

নরসুন্দা ডটকম   মে ৫, ২০২০
ঘাতক

অনু পরমানুর বিশ্বে একটি পারমানবিক গবেষণাগারে জারণ-বিজারণের ভুল সিদ্ধান্তে কিংবা অসতর্ক ক্রিয়ার ফলে জন্ম নিতে পারে একটি সংকরায়িত অনুজীব।যদি তা অনুজীব গবেষণাগার হয়। আর যদি পারমানবিক চুল্লি হয় তাহলে জন্ম নেয় ক্রজ টমাহক মিসাইল। আরো কতকিছু।

ভুল বিজারণে অশনিসংকেত পৃথিবীর জন্য। মানব সভ্যতার জন্য। যা বলছিলাম, বিজ্ঞানের সর্বশেষ উৎকর্ষতা নিয়ে যখন বিশ্ব ছুটে চলছে ঠিক এই সময়টাতেই সমস্ত পৃথিবীকে বিশেষ করে মানবসভ্যতাকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিলো কভিড-১৯ নামক একটি অনুজীব প্রজাতি।বিশ্বকে থামিয়ে দিলো অঘোষিত শক্তির মহিমায়। সমস্ত পৃথিবী লকডাউন। স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী। মানুষ থেমে গেল। করোনা বিশ্ব সাম্রাজ্যের ডিক্টেটর। মুকুটবিহীন রাজার রাজত্বে অসহায় মানুষ দাসত্ব স্বীকার করে নিতে বাধ্য হলো।কী এই করোনা ভাইরাস? খালি চোখে দেখা যায় না। অথচঃ মৃত্যুর মিছিল তামাম জাহানে।

করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রথম গবেষণা শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ডক্টর রালফ এস ব্যারিক যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (চ্যাপেল হিল) একজন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ। ২০১৫ সালে তিনি ঘোড়া বাদুরের লালা নিয়ে গবেষণা করে প্রথম আবিস্কার করেন করোনা ভাইরাস। তখন তিনি এটির একটি নাম দিলেন- এসএইচসি-০১৪। এই কথা তিনি ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে “নেচার মেডিসিন” জার্নালে একটি গবেষণাপত্রে প্রকাশ করলেন।

তারপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই গবেষণায় প্রচুর অর্থ বরাদ্দ করলো। মজার ব্যাপার হলো- ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে ‘দ্য সায়েন্টিস্ট’কে অণুজীব বিশেষজ্ঞ রিচার্ড এডব্রাইট এক সাক্ষাৎকারে এটি নিয়ে মারাত্মক উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তখন এই গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভয়ংকর বিপজ্জনক গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ প্রত্যাহারের পরেও ডক্টর রালফ ব্যারিক কিন্তু থেমে থাকেননি। তিনি তাঁর গবেষণার নমুনা নিয়ে চীনের উহানে ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে চলে যান আরো গবেষণা করার জন্য। চীনের উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি হলো বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অণুজীব গবেষণাগারের একটি। আর এই চীনের উহান থেকেই করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পরে। এই হলো ঘটনা।

সন্দেহ জাগে যথেষ্ট ডক্টর রালফ ব্যারিক কি চাইছিলেন বিখ্যাত উপন্যাস ফান্কেষ্টাইনের মতো কভিড-১৯ এর সংকরায়িত প্রজাতি? কয়েকবছর আগে নেদারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা যেরকম সিংহ ও বাঘের জ্বিন থেকে নতুন একটি প্রজাতি বের করেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন লাইগার। সামনাটা সিংহের মতো আর পেছনের বডি বাঘের মতো।আচরণ ছিলো হাইব্রিড ব্রয়লার মুরগীর মতো। স্বল্প আয়ু হয়েছিল লাইগার। আচরণের ভিন্নতাও ছিলো দেখার মতো। অনুজীব কভিড-১৯ এর আচরণ ও উপসর্গও একেক দেশে একেক রকম।

পৃথিবীর বৃহৎ অনুজীব গবেষণাগার উহান ইনিষ্টিউড অব ডাইরোলোজিতে কি এমন একটি অনুজীব প্রজননের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ছিলেন কি না ডক্টর রালফ ব্যারিক। কে জানে? চায়নারা এমনিতেই নিজস্ব সার্ভার ছাড়া বিশ্বমিডিয়াতে রাষ্ট্রিয় শৃঙ্খলাব্ধ। আর চ্যাপেল হিল থেকে গবেষণার জন্য ডক্টর ব্যারিককে উহানে পাঠানো যদি সিআইয়ের একটি প্রজেক্ট হয় তাহলে উহান লকডাউন করে করোনার বিশ্বায়ন করে ডাউন অব বেনিফিট নিচ্ছে চীন। বুমেরাং হচ্ছে সিআইয়ের প্রজেক্ট। ইতিমধ্যে ইউ ইউয়ের হেভি ইন্ডাস্ট্রিয়াল শেয়ার বাজারের ৩০% শেয়ার কিনে নিয়েছে চীন। সংবাদ মাধ্যমে ডোনাল্ট ট্রাম্পের দেউলিয়া কথন আর ওদিকে মিঃ শিংফের হাসিমুখে কথা বলা কভিড-১৯ এর চেয়ে খবিশ-৪২০ মনে হয়।

যাক এবার আসি বিজ্ঞানের সূত্রে কভিড-১৯ এর নিরপেক্ষতায়। পানিতে যেমন মাছের আবাস তেমনি বাতাসে মানুষের বাস। পানি থেকে ফুলকার সাহায্যে অক্সিজেন গ্রহণ করে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রানীকূল বেঁচে থাকে।বাস্তুসংস্থানের ব্যত্যয় হলে বা পানি দূষিত হলে মাছের ফুলকা পচা রোগ দেখা দেয়।মহামারী হয় প্রজাতির।ঠিক তেমনি বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্থর আমরা নষ্ট করে ফেলেছি অনেক আগেই।শিল্পায়নের বর্জ্য পরিবহন সেক্টরের কোটি কোটি যানবাহনের কালো ধোঁয়া প্রতিদিন কোটি কোটি ট্রিলিয়ন কার্বন ও মিথেন মিশ্রিত হচ্ছে বায়ুমন্ডলে।পরিশোধন করার মতো বৃক্ষরাজি নেই বসুন্ধরার মাঝে। নদীশাসনের ফলে আবর্তন নেই আবহাওয়া ও জলবায়ুর রুটিনে। সাগরের উষ্ণতায় বরফ গলছে। বায়ু সাগরে ডুবে থাকা ৭৫০ কোটি মানুষের ফুঁসফুঁস কার্যকারিতা হারাচ্ছে। আর এই ফুঁসফুঁসে বাসাবেঁধে মানুষের ফুলকা পচা রোগ করোনা নয়কি?

এবার আসি অর্থনীতি বিশ্বাস সাম্রাজ্যবাদ ও শোষনের দিকে। করোনার প্রভাব কী এবং কেন? আমরা ইতিহাসে দেখেছি চেঙ্গিসখানের মগের মুল্লুক তন্ত্র। রাজা অশোকের বটবৃক্ষ ও সূর্য পূজাতন্ত্র। উত্তর ভারতীয় রাজা মান্ধাতার একহাজার বছরের মাইট ইজ রাইট তন্ত্র। প্রাচীন গিলগামেস, গ্লাডিয়েটর তন্ত্র। মৌলিক গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র। বর্গী মগ উদ্ লূত ফারাও তন্ত্র।ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ভাগতন্ত্র। গণীমতের মালতন্ত্র। সবতন্ত্রের মন্ত্র একটাই। ক্ষমতা আর অর্থ। সেই অর্থে কভিড-১৯ বেচারা খুব সাম্যবাদী।

কাউকে প্রণোদনা দিচ্ছেনা। সমস্ত পৃথিবীর সবকিছু নন- খালাসী। আপ এন্ড ডাউন কিংবা রান দ্য ওয়ে সব লকডাউন। দূরে থাকো বেঁচে থাকো। তন্মধ্যে করোনা ভাইরাস নিয়ে গোটা বিশ্বে আতংক ছড়িয়েছে। যা অনেকটা অস্ত্রহীন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মত। করোনা ভাইরাস সবচেয়ে কীসে বেশি প্রভাব বিস্তার করবে? বিশ্বাস ও বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করবে। আপনি আপনার বন্ধু’র করোনা ভাইরাস রয়েছে কিনা তা বিশ্বাস করতে পারবেন না। তার সাথে করমর্দন, কোলাকুলি এসব এড়িয়ে চলতে শুরু করবেন। আপনার বিশ্বাসে চিড় ধরবে। মানুষ থেকে মানুষকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য করোনা ভাইরাস দীর্ঘদিন সংক্রামকের মত কাজ করবে।

কভিড-১৯’র আরেকটি দিক বিশ্বে আলোচিত উপাখ্যানের সৃজন করছেে নিত্যকার। সেটি হচ্ছে ধর্মীয় দিক। চীনের উঁইঘরে সিরিয়ায় কাশ্মীরে ফিলিস্তিনে আরো কতো দেশে শতাব্দীর পর শতাব্দী মুসলিম নিধন চলে আসতেছে। জাতিসংঘ ওআইসি বিশ্বের কোন মানবাধিকার সংগঠন এই নিধনকাণ্ডের কানা গরুর আলগা বাতানের ভূমিকায় অবতীর্ণ। রাজা ফান্ডিনান্ড ও রানী ইসাবেলা থেকে শুরু। আজ অবধি এ্যান্টি ইসলাম মাষ্টারপ্ল্যান চলছেই। তাও থামিয়ে দিলো কভিড-১৯।

সব বিশ্বমোড়েল আজ আকাশের দিকে। ঠাঁকুর ঘরে কে? আমি কলা খাইনা।এই সনাতনবাদীরাও আজ আযানের মুক্ত অর্ডিন্যান্স জারি করে।গীর্জায় ধর্ষিত সোফিয়া লরেনের বিখ্যাত ছায়াছবি টু উইমেন্সের বিখ্যাত ইউরোপের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ প্রেসকিপসন হচ্ছে ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন।টাচ্ ফোনের আবিস্কারক চীনের নব্য ডাচরুপী চীনের টিনেজারেরা পবিত্র ঐশি গ্রন্থ আল কুরআন কিনতে ব্যস্ত। শান্তির বাণী আর জ্ঞানবাণীর উত্তরসূরি মিডিল ইষ্টের বেদুঈন স্বৈরশাসকদের তখতে তাজও নড়বড়ে। করোনার প্রতিষেধক আবিস্কারের একশো বিশ্বসেরা চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মধ্যে কেবল একজন আছে।

তাও ছেচল্লিশ নম্বরে, ইরানের একজন। ভার্চুয়াল লাইফ কতোটা পিছিয়ে দিলো ইবনে সীনা আলবেরুনীদের উত্তরসূরিদের। মসজিদ মন্দির গীর্জা প্যাগোডা ভিত্তিক পোষাকী প্রেমের ধর্মাচারী সব হোম কোয়ারেন্টাইনে। মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) প্রায় চৌদ্দশত বছর আগে বলে গিয়েছেন-মহামারিতে তোমরা যার যার গৃহে অবস্থান করো। তাও মানতে নারাজ বাঙ্গালী মুসলমান। আরে চৌদ্দশত বছর ধরে যে গৃহগুলিতে নামাজ হতো না, কুরআন তেলাওয়াত হতো না আজ সেসব গৃহে নামাজ হচ্ছে, কোরআন তেলাওয়াত হচ্ছে। সর্বভাষা বুঝে প্রভু আপে নিরঞ্জন।বুজলো না ধর্ম কারবারিগন। সব ধর্মবাদীরাই ডাক্তার মানে প্রেসকিপসন মানে না।মানালো কে? কভিড-১৯।

আমাদের ভাবতে হবে। কভিড-১৯ সৃষ্টিকর্তা প্রবর্তিত হলেও এটা মানুষের অসতর্কতার ফসল। চিড়িয়াখানার মতো মানুষ বন্দীপ্রাণী। আর সকল প্রাণী মুক্ত।ম্যালথাসের জনসংখ্যাতত্ত্বের জ্যামিতিক আর গাণিতিক হারের খেলা অবশ্যই মানবসৃষ্ট। সীমালঙ্ঘনের খেসারত। বিগত গুটিবসন্ত কলেরা এ্যাবোলা স্পেনিস ফ্লু মানবসৃষ্ট অমানবিক কার্যকলাপের নামান্তর। ইতিহাস তাই প্রমান করছে। নগরে আগুন লাগলে দেবালয় বাকী থাকেনা।

একাকিত্বের থেকে শিক্ষা নিতে হবে সামষ্টিকতার। মানবিক পৃথিবী গড়তে যার যার অবস্থান থেকে মানুষের জয়ে নতুন সূর্যের ছবি আঁকতে হবে! নইলে একা একাই ভাবতে হবে।সৃষ্টির সেরা সামাজিক শ্রেষ্ঠ প্রাণীটির উপর আদেশ আসবে, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখুন। সমাজবিজ্ঞান পুস্তক থেকে মুছে ফেলতে হবে,মানুষ একটি সামাজিক জীব। আশাকরি সেই দিনটি আসার আগেই আমরা বিশ্বদরবারে আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পাড়বো।অতিকায় ডাইনোসর লোপ পাইয়াছে।কিন্তু আমরা বাঁচিয়া আছি সভ্যতার সভ্য জাগরনে

আমরা আর একটুও ভাবতে চাইনা, এ পৃথিবীতে আমার কোনো বন্ধু নেই। অবশ্য এ নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ, অনুযোগ, উৎকণ্ঠা নেই,বন্ধুহীন পৃথিবীর রাস্তায় আমি যে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হাঁটি, তা বন্ধুহীনতার নয়, নয় একাকীত্বের। কেবল একরাশ ক্লান্তির! এ পৃথিবীতে ক্লান্তি মুছবার মত আমার কোনো গামছা নেই।

আমি ফুটপাতে দাঁড়িয়ে নতুন গামছা দেখি। এ পৃথিবীতে আমরা প্রত্যেকেই তো একেকটা দীর্ঘশ্বাস বয়ে বেড়াই। এ বিশ্বে প্রত্যেকের মন একেকটা সাদা থান পরে আছে। বিধবা মন নিয়ে সাংসারিক দম্পতি যাপন করছে দিনরাত। এর চেয়ে নৃশংস নয় আমার বন্ধুহীনতা। আমি আমার অবসাদ ফেরি করি না কারো দুয়ারে। যে সমাজে সকালের রোদেরা অভিশপ্ত, হাড়ের সন্ধিতে জমাট ব্যথার মত অসহ্য জীবন যাপন, সেখানে আমার দুঃখের কথা বলে আমি কার বুক ভারী করব? শীঘ্রই ছেড়ে যাব এ পৃথিবী। দূরে, অন্য কোনো শহরে গড়ব বসতি, তবে অত তাড়া নেই। ঠিক ট্রেনের অপেক্ষায় যদি কেটে যায় একটা জন্ম, তবু ভুল ট্রেনে চড়ব না।মহামারী করোনায় প্রাণ নিলো যাদের, তাদের আত্মার মুক্তি কামনা করি।যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের আরোগ্য কামনা করি। যারা বেঁচে আছি কবি সুকান্তের ভাষায় আমরা শপথ করি, পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে যাবো আমি, নব-জাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

আফজল হোসেন আজম : শিক্ষক ও নদী রক্ষা আন্দোলন কর্মী, তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ।

আরও পড়তে পারেন….

কাঁদছে মানুষ, হাঁসছে প্রকৃতি ।। ফয়সাল আহমেদ

দুই বাঙালী ফুটবলার চুনী-পিকে নেই, আমাদের সীমাহীন মনখারাপ

About the author

নরসুন্দা ডটকম