ফিচার

করোনায় চার দেয়ালে বন্দী শিশুর জীবন!

নরসুন্দা ডটকম   এপ্রিল ১৬, ২০২০

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে এটি মহামারী আকার ধারণ করেছে। প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারাও যাচ্ছে। ফলে মানুষের মধ্যে তৈরি হচ্ছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। সময়ের সাথে সাথে সব বয়সী মানুষেরই মানসিক অবস্থার অবনমন ঘটছে। ঠিক তেমনিভাবে শিশুরও মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। কেননা বর্তমানে করোনায় চার দেয়ালে বন্দী থাকা শিশুর কাছে বাইরের জগত ছোট হয়ে আসছে। এই সময়ে তার মেজাজ পরিবর্তন হয়ে খিটখিটে স্বভাবে পরিণত হয়েছে। অনেক শিশুর স্বাভাবিক আচরণই পাল্টে গেছে। যা শিশুর জন্য খুবই মারাত্মক।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মহামারী বা দুর্দশার সময়ে শিশুর দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। সে বিভিন্নভাবে পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হয়। ফলে তাদের মধ্যে উদ্বিগ্নতা, অতিরিক্ত রাগ, পরিবারের সদস্যদের থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখা, সারাক্ষণ নিশ্চুপ থাকা ইত্যাদি প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে শিশুর প্রতিক্রিয়াগুলোকে সহজভাবে নিতে হবে। তার কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শোনা এবং যথাসম্ভব বেশি বেশি আদর করতে হবে। শিশুর প্রতি মনোযোগী হয়ে খুব ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে। যাতে করে সহজেই সে পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, যেহেতু করোনাভাইরাস কোথাও কোথাও কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে। তাই খুব প্রয়োজন ছাড়া বড়রা তো বটে, শিশুকে নিয়ে বাইরে বের হওয়া যাবে না। কেননা, এখন কার শরীরে এই ভাইরাস আছে তা তো পরীক্ষা ছাড়া বলা যাবে না। তাই অবশ্যই সবাইকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিতে খুব সচেতন থাকতে হবে।

পড়তে পারেন- মহামারী করোনা ও গণমাধ্যমকর্মীদের হাহাকার: মাজহার মান্না

বৈশ্বিক সমস্যায় প্রতিদিন মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অভিভাবকগণ শিশুর নানা বায়না পূরণ ও আকুতি মিনতিতে অস্থির সময় পার করছেন। কেননা যে শিশুর মনোজগতে প্রতিনিয়ত খেলা করে বৈচিত্র্যময় নতুন পৃথিবী! অবাক পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা। দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা। নির্বাক আকাশ দেখতে দেখতে শিশুর মনে হাজার প্রশ্ন জাগে রঙিন দুনিয়া নিয়ে। জিজ্ঞাসা করা এসব প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে বাবা-মা যেন পাগলপ্রায়।

একজন শিক্ষিত মা-ই পারে প্রজন্মের হাতধরে জাতি গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে। বর্তমান বাস্তবতার নিরিখে শিক্ষিত নারীর কর্মক্ষেত্রে যোগ দেবার মোক্ষম সময়। আর এমনটা এখন স্বাভাবিক। কিন্তু এর ব্যতিক্রমও আছে। উচ্চ শিক্ষিত নারী জারিন তানজিম। একান্নবর্তী পরিবারে থেকে স্বামী-সন্তানকে ঘিরেই তার জগতসংসার। শিশুকন্যা মাশরুফা মুনতাহাকে শিশু বয়স থেকেই অফুরন্ত স্নেহ মমতা আর ভালোবাসায় তৈরি করতে মনোনিবেশ করেন।

শিক্ষিকা নূরুন্নাহারের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি একদমই ভিন্ন! তাই কাজে অনেক সময় বাইরে বের হতে হয়। যখন বাড়ি ফিরি তখন পাঁচ বছরের সামিহা তাবাসুম দৌঁড়ে আসবে কোলে উঠবার জন্য। কিন্তু কাপড়-চোপড় বদলে, গোসল করে, স্যানিটাইজার মেখে পরিচ্ছন্ন না হওয়া পর্যন্ত ওকে ছুঁতে পারিনা। আর বাবা কলামিস্ট গাজী মহিবুর রহমানকে মেয়ে প্রায়ই বলে, বাইরে বের হতে। তাকে নিয়ে এখানে সেখানে ঘুরে আসতে। কিন্তু মেয়ের আবদার বাবা-মা কিছুতেই রাখতে পারছিনা। মানসিকভাবে আবেগের দিক থেকে, এটা বেশ কঠিন সময় পার করছি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে শিশু ঘরের মধ্যে থাকতে থাকতে একঘেয়েমি হয়ে উঠে। এমনিতেই তারা খুব চঞ্চল প্রকৃতির। তাকে এখন চার দেয়ালের পরিবেশেই থাকতে হয়। বড়জোড় সে ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ির সামনের খোলা জায়গায় বা বাসার রেলিং-ছাদে সময় কাটাতে হচ্ছে। এতে করে শিশুর চরিত্র পাল্টে গিয়ে তার আচরণে একধরনের পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক। এটি দীর্ঘস্থায়ী হলে শিশুর মনোজগতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সবশেষে বাবা হিসেবে একমাত্র কন্যা মুনতাহাসহ সকল শিশুর জন্য অকৃত্রিম স্নেহ আর ভালোবাসা। বৈরি এই পরিবেশ একদিন কেটে গিয়ে তাদের ভবিষ্যত জীবন উন্নতি আর সাফল্যময় হয়ে উঠবে এমনটাই প্রত্যাশাই রইল।

লেখক : দৈনিক জনকন্ঠের সাংবাদিক ও আয়কর আইনজীবী, কিশোরগঞ্জ।

 

আরও পড়তে পারেন- 

শারীরিক দূরত্ব না সামাজিক দূরত্ব? : তাপস দাস

করোনা ভাইরাস গিলে নিল নববর্ষকে, আনন্দকে: তুহিন শুভ্র মন্ডল

About the author

নরসুন্দা ডটকম