খটাখট আওয়াজ। দুটো পাথরের টুকরোকে গানের সঙ্গতে এভাবে একজনই তো বাজাত! আরে তাই তো! গলাটা যে খুব চেনা!একটু কর্কশ… খুব চেঁচিয়ে গাইছে। চড়া মাত্রা কিন্তু মোটেই বেতালা নয়। আর সেই একই ভুল! হিন্দি গানে যা ইচ্ছা কথা বসিয়ে গাওয়া —
‘প্যার দিবানা হোতা হ্যায়/ তো দেখা না যাতা হ্যায়…’
বেশ পুরোনো গান। কিশোরকুমারের গাওয়া, এখনো জনপ্রিয়। চারিদিকে তাকাচ্ছি। কোথায় সে?
মে মাসের মাঝামাঝি,দুপুর প্রায় সাড়ে এগারোটা, আগুন নেমে আসছে ওপর থেকে। গলিটা যেখানে বাস রাস্তার সাথে মিশেছে সেই মোড়ের মাথার চায়ের দোকানে,পানের দোকানে অন্য রবিবারগুলোতে এই সময় বেশ জটলা চলে। আজ কোত্থাও কেউ নেই। রাস্তায় ঝামেলা বাড়ানোর অটো, মটরসাইকেল, রিক্সা, ছুটকো ছাটকা বালি, ইট, মাটি,পাথরের লরি…নাহ্ কিছুই চোখে পড়ছে না। শুধু সামনেপেছনে দূরের রাস্তার আধগলা পিচের উপর থেকে হালকা বাষ্প মিশে যাচ্ছে আকাশে।সেই ধোঁয়ার পিছনে যা কিছু দেখা যাচ্ছে সবই বড় অস্পষ্ট… বড় আঁকাবাঁকা।
তাকে পাচ্ছিলাম না। ভাবছিলাম—থাক চলে যাই। ঠিক তখনই সেই গানে একটা ঝাঁকুনি পড়ল। এ তো সেই দম নেওয়ার ‘ঝাঁকুনি’। আওয়াজটার সঙ্গে ট্রেনের ঝাঁকুনির কোথায় যেন একটা মিল আছে। ট্রেন দুলে উঠলে এইভাবে‘ঝাঁকুনি’ পড়ত গানে। ডেলি প্যাসেঞ্জারেরা হৈ হৈ করে বলত…বাবা ‘লোকাল’ স্পিড কমাও। অ্যাকসিডেন্ট হয়ে যাবে!…
যাত্রীরা সাউথ লাইনের ট্রেনগুলোর ছোট ছোট নাম দিয়েছে। লক্ষ্মীকান্তপুর লোকালকে লক্ষ্মী। ডায়মন্ডহারবারকে ডায়মন্ড। কিন্তু বারুইপুর লোকালের নাম লোকাল। অথচ সে কিন্তু বারুইপুর সমেত সব লাইনেই গান গাইত। তাহলে কি তার হেলেদুলে চলার সাথে লোকাল ট্রেনের মিলের জন্যই তার নাম ‘লোকাল’ হয়েছিল। জানি না! আজ সব মনে পড়ে যাচ্ছিল।মনটা আনচান করে উঠল। নাহ! দাঁড়াই। একবার দেখা করি।
দুই.
উচ্চতায় মেরেকেটে চারফুট সাত-আট। বয়স বছর আঠাশ-তিরিশ! ঘাড়টা সামান্য ডানদিকে বাঁকা। গোলগোল দুটো বড়বড় চোখ। আর খাটো প্রায় সমান উচ্চতার হাত আর পা। চারকোনা, চ্যাপ্টা শরীরটার জন্য দূর থেকেই নজর চলে যেত ওর দিকে। অফিসফেরত আমরা ক্লান্তিতে ঢুলতাম। তবুও যেই ঐ কিম্ভূত দেহটা তার গান, আর অদ্ভূত বাজনা নিয়ে হাজির হত। আমাদের মুখে হাসি ফুটে উঠত। বাজারচলতি লোকগীতি গাইত ও । তবে ছেলে ছোকরাদের অনুরোধে দ্রুত লয়ের হিট হিন্দি গানও ওকে গাইতে হত। ওরা সিটি দিত, হাততালি দিত আর বলত, ‘ওস্তাদ…ঝিঙ্কিচ্যাকি’। তারপরেই মুখরা আর অন্তরার মাঝে তালে তালে লোকাল গাইত‘ঝিঙ্কিচ্যাকি ঝিঙ্কিচ্যাকি’ । পাথরের টুকরোর বাজনার সাথে ঐ ‘ঝিঙ্কিচ্যাকি’একটা মজার অর্কেস্ট্রা তৈরি হত। এভাবেই লোকাল জমিয়ে নিত নিজের শ্রোতাদের। কিন্তু ওর বুকে দড়ি দিয়ে ঝোলানো টিনের কৌটোটায় পয়সা পড়ত বেশ কম। অল্পবয়সী ছেলেগুলো পয়সা তো দিতই না উল্টে ওর কৌটো থেকে টাকা-পয়সা তুলে নিত। ওকে দেখিয়েই। খুব রাগ হত আমার।
একদিন ফেরার সময় আচমকা ফাঁকা কামরায় আমার সামনে লোকাল। বললাম, “ছেলেগুলো তোর সঙ্গে শয়তানি করে। পয়সা কেড়ে নেয়। ওদের বাঁদরনাচ না দেখিয়ে শরীরিটাকে বিশ্রাম দে। গাইতে সুবিধা হবে। দুটো বাড়তি পয়সা পাবি।’’
জিভ কাটল লোকাল; ‘‘ কাকু! ওরা আমার বন্ধু… হিন্দি গান করলে ওরা মজা পায়। না হলে আমাদের কিত্তুনে বংশ। আমরা ওসব…। গোপালের প্রাণ বাঁচানোর জন্য সুবল, সুদামরা বিষফল খেত। আমি না হয় দুটো হিন্দি গান গাইলাম। তাছাড়া ওরাও তো চা খাওয়ায়। বিড়ি দেয়। তো, বিড়ি খাওয়ার জন্য দুটো টাকা নিচ্ছে। নিক না!’’
এই ধরনের সরলকে বুঝিয়ে লাভ নেই। ক্ষতিতেই এরা মজা পায়। জ্ঞানলাভ হয়েছিল। তবে ছেলেটাকে ভাল লেগে গেল। দেখা হলে হাসতাম। সেও হাসত। কখনও দু-একটা কথা। কোনোদিন দু-এক টাকা দিতাম। কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠত ওর মুখ। অনেকগুলো বছর এইভাবে কেটেছিল। তারপর ইংরেজি মাধ্যমে পড়িয়ে ছেলেমেয়েকে মানুষ করার জন্য দেশের বাড়ি ছেড়ে চলে এলাম কলকাতার ‘অ্যাডেড এরিয়ায়’। রোজের ট্রেন যাত্রা বনধ হয়ে গেল। ‘লোকাল’ও হারিয়ে গেল!
তিন.
“ প্যার দিবানা হোতা হ্যায়/ তো দেখা না যাতা হ্যায়……হর কিসিকি/ দিল মে তো/ আরকানা যাতা হ্যায়।’’
গানের কথা বেশ স্পষ্ট । সন্দেহ নেই… এটা ‘লোকাল’ই । কিন্তু এ তো কীর্তন বা চটুল হিন্দি গান না। আমাদের কিশোর-যৌবনের একটা অত্যন্ত জনপ্রিয় রোমান্টিক গান। ইচ্ছেমত ঢুকিয়ে দেওয়া শব্দগুলোর মানে আছে। কিন্তু ‘আরকানা’মানে কী? হাজার চেষ্টা করেও উদ্ধার করেতে পারছিলাম না।
লু এর একটা মারাত্মক হলকা এল। আমার নাক,চোখ,কান এর ভেতর দিয়ে ঢুকে জ্বালিয়ে দিল গোটা শরীর। হাতের ছাতাটা কেঁপে উঠল। সব ভুলে গিয়ে ডানদিকে ঘুরে ছাতাটাকে সোজা করতে গেলাম। চোখে পড়ল রাস্তার উল্টোদিকের বাই-লেনের ভিতর থেকে গান গাইতে গাইতে ‘লোকাল’আসছে।
রাস্তার ওপারে গেলাম। সেই চেহারা তবে পোষাক অনেক জমকালো। লাল টি -শার্ট, পুরোনো চকচকে নীল জিন্স, সস্তার সানগ্লাস, মাথায় সবুজ ক্যাপ। হাতে বেজেই চলেছে পাথরের টুকরোদুটো। গোটা পাঁচেক চার-তলা নিয়ে হাউসিং কমপ্লেক্স… ‘ভিক্ষুণী’। তার বন্ধ গেটের সামনে ‘লোকাল’। ঐ গানটা গেয়েই যাচ্ছে। মাঝেমাঝে সেই ‘ঝাঁকুনি। আমি পেছন থেকে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখলাম। গান বন্ধ করে ও আমার দিকে ঘুরল। চিনতে পেরেই একগাল হাসি।
‘কাকু !…আপনি! ভাল আছেন?’
‘চলছে । তুই হঠাৎ!এখানে ? কিশোরকুমারের গান গাইছিস তাহলে ? ’
‘কাকু পরিবর্তনের যুগ, এখন নতুন নতুন গান গাইতে হবে’।
বলেই ঝাঁকুনি দিয়ে আবার গাইতে শুরু করল,
‘প্যার দিবানা হোতা হ্যায় তো…’।
ওকে থামিয়ে দিলাম-
‘ কিন্তু তুই তো কিশোরকুমারের গান…’
দুচোখে সরলতায় মাখামাখি মিষ্টি হাসি; ভিক্ষুণিকে দেখিয়ে ও থামিয়ে দিল আমায়,
‘ এখন ইনকামের টাইম। দেখেছ…ইংলিশ বলছি। খদ্দেরটা সেরে নেই অ্যাঁ! তারপর।’
চড়া রোদ, গায়ে,নাকে মুখে লু-এর জ্বালা, নিজের জরুরি কাজ সব উপেক্ষা করেই আমিও ওর সাথে বন্ধ গেটটার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লাম’।
চার.
এক সন্ধ্যায় লোকালের দেখা ফাঁকা স্টেশানে দেখা। সিমেন্ট-বেঞ্চে বসে সে পয়সা গুনছিল। সবই খুচরো কয়েন। টাকায় মোটেও বেশি না। তবুও বললাম,
‘ কী হবে এত পয়সা?’
এমন কথায় কেউ খেকিয়ে উত্তর দেয়। কেউ এড়িয়ে গিয়ে মনে মনে কষে গালাগাল দেয়। কিন্তু ও হাসল। যেন অনেক টাকা রোজগার হয়েছে। তারপর বলল;
‘পয়সা না কামালে বিয়ে করব কী করে!’
বিয়ে! এই সাড়ে চার ফুটিয়া,ঘাড় কাত হয়ে থাকা মূর্খ ভিখারি! যার রোজগার সারা দিনে ঐ কয়েক টাকা, সে কী করে বিয়ের স্বপ্ন দেখতে পারে আমার মাথায় আসছিল না।তবুও নির্বিকারভাবে ওর কাছে জানতে চেয়েছিলাম,
‘বিয়ের জন্য একটা মেয়ে দরকার হয় তো ,কোনো মেয়ে পছন্দ হয়েছে নাকি তোর!’
‘তা কাকু আছে একজন’।
‘মেয়ে? কী করে সে? কেমন দেখতে?’
নির্লজ্জ একটা প্রশ্ন। কিন্তু আমি লজ্জা পেলাম না! লজ্জা পেল ও! কিছুক্ষণ মাথা নীচু করে থেকে বলল,
‘মায়া… গায়ের রঙ ঠিক সাদা পাটালি।কুচকুচে কোঁকড়া কালো চুল। লম্বা বিনুনি! আমার থেকে এই এত্তটা উঁচু।’
হাত তুলে মায়ার উচ্চতা যে প্রায় ওর থেকে ফুটখানেক বেশি উৎসাহের সঙ্গে দেখিয়ে দেয় ‘লোকাল’।
‘ওর বাবা রমেন কাকা। আগে আমাদের গ্রামে চায়ের দোকান করত। এখন স্টেশানে করেছে।’
‘তুই যে মায়া কে বিয়ে করবি ও তোর মত একজন নাটাকে পছন্দ করবে?’
আমি কেন আরও অভদ্র হয়ে উঠছিলাম সেদিন? কিন্তু ওর সেদিকে খেয়াল ছিল কি? নিশ্চই না। ও বলেই যাচ্ছিল;
‘‘রোজ ফেরার পথে রমেনকার দোকানে এক গেলাস চা খাই। গেলাসটা আমার হাতে তুলে দিয়ে ও সবার সামনে কী বলে জানেন!…বলে-
তোমার গলাটা ঠিক যেন কিশোর কুমার… আমায় কবে নেবে গো কিশোর কুমার? একলা ঘরে বসে তোমার গান শুনব- তারপর না এক একদিন সবার সামনেই আমার গলা জড়িয়ে ধরে”
ফুলঝুরি জ্বলছিল ওর চোখে;
‘ কাকু আমি কী কিশোর কুমারের গান গাইতে পারব?’
‘বিয়ে আগে দরকার নাকি কিশোরের গান?’
‘দুটোই দরকার। বিয়ের পরই তো গান শোনাতে হবে। না পারলে তো মায়া মনে মনে কষ্ট পাবে’
‘বিয়ের জন্য কী কী দরকার হয় জানিস? বাড়ির লোক সব জানে? তারা মত দিয়েছে?’
‘ঠাম্মা ছাড়া আমার কেউ নেই। বুড়ি পারলে কালই বিয়ে দেয় ! কিন্তু থাকার চালাটা ঠিক করতে হবে। আরো কিছু খরচা আছে, শাড়ি,গয়না,খাওন—দাওন। টাকা লাগবে অনেক। তাই তো এখন বেশি বেশি খাটছি।’
বেশি খাটার ফল নিজের চোখেই দেখেছিলাম তাই আর কথা না বাড়িয়ে শুধু জিজ্ঞাসা করেছিলাম,
‘মায়ার বাবাকে বলেছিস?’
‘এখনও বলিনি তবে খুব শিগগিরি বলব।’
বলার পর কী ফল হতে পারে আন্দাজ করতে পেরে চুপ করে গিয়েছিলাম। কিন্তু ও কেন তা ভাববে! আনন্দে মশগুল ‘লোকাল’ বলেই ফেলল;
‘কাকু বিয়েতে আসতে হবে কিন্তু!’
কিন্তু যেতে পারিনি। তারপরেই নাম করা ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তির তালিকায় উঠল মেয়ের নাম। তিরিশ হাজার ঘুষের বিনিময়ে সু্যোগ। ছাড়া যায়? সাথে কলকাতা শহরের সুবিধা!
পাঁচ.
‘ভিক্ষুণী’ লোকালকে নিরাশ করল। ওর চিৎকার শুনে কেউ এসে কিছু দিল না। সিকিউরিটি গার্ডগুলো খুব হাসছিল ওকে নিয়ে– এই চেহারা, এই সাজগোজে , এই গানে কেউ ভিক্ষে দেয়? রাস্তায় আছে তো কি…আরেকটু জোরে চিৎকার করলে ধাক্কিয়ে অনেক দূরে দিয়ে আসবে। গান শেষ হলে মিনিট দুয়েক আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল ‘লোকাল’। হয়ত ‘ভিক্ষুণীর’ গর্বিত উচু মাথাগুলো দেখছিল।তারপর আমার দিকে ঘুরে বলল,
‘জমল না কাকু। আমার অনেক টাকা দরকার।’
সেই বিয়ের সময় ওর টাকার দরকার ছিল । আবার এখন বলছে ‘অনেক টাকা’র দরকার। কী ব্যাপার! আর এইভাবে কি অনেক টাকা কামানো যায়? কলকাতার দুপুর রোদে এভাবে ঘুরলে সানস্ট্রোকে মরতে হবে! এই ভোঁতা অনুভূতির শহরে কে শুনবে ওর ঐ অদ্ভূতুড়ে গান? কীকরে ও টাকা রোজগার করবে? প্রশ্ন-সন্দেহ ঘোলাতে লাগল আমার মনে। ওর হাঁড়ির খবর জানার ইচ্ছেটা আরো বেড়ে উঠল। ভদ্রতা বজায় রেখে কীভাবে জানা যায় ফন্দিটা প্রায় বের করে ফেলেছি। কিন্তু লোকাল সে সুযোগ দিল না। বলে উঠল,
‘ আপনাদের বিরাট এলাকা। এত্ত ফ্ল্যাট, কত বড় বড় বাড়ি। ঠিক হয়ে যাবে। আমাকে কামাতেই হবে’।
‘ এই চাঁদিফাটা গরমে কে বেরোবে তোর গান শুনতে?’
‘ গোপালের দয়া আছে কাকু। এই দেখুন না, জয়গোপালই তো আজ পাঠিয়ে দিল আপনাকে’। এরপর সম্পূর্ণ প্রসঙ্গ বদলে বলল,
‘খুব জল তেষ্টা পেয়েছে কাকু, একটু জল হবে?’।
মরুভূমিতে জল পাব কোথায়! আর এমন নমুনা বাড়ি নিয়ে যাওয়ার শক্তি আমার নেই। কিন্তু শহরের অতিথি সৎকারের কায়দা আমি শিখে গেছি। দূরে বাসরাস্তার মুখের চায়ের দোকানটা নজরে পড়ল।
ছয়.
চায়ের দোকানেও এখন প্ল্যাস্টিকের সিলিন্ডারে রাখা মিনারেল ওয়াটার কিনে খেতে হয়। সেই লম্বা লম্বা জাগ নেই আর বিনি পয়সার জলও নেই। জল মোটেও ঠান্ডা না। চোখ মুখ কুঁচকে সেই বিস্বাদ গরম জল দু-গ্লাস খেল লোকাল। চারিদিকের এই ভয়াবহ দাবদাহ আর রোজগারের ছিরি দেখে দুঃখ লাগল মনে। ওর জন্য একটা ডিমটোস্ট বললাম। কৃতজ্ঞতার একটা হাল্কা হাসি হেসে গোগ্রাসে খেয়ে ফেলল খাবারটা। তারপর নিজেই বলল,
‘একটু চা হবে না কাকু?’
গুচ্ছের কাজ পরে রয়েছে। অন্যদিকে চায়ের দোকানের গুমোট গরমে সেদ্ধ হতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু ‘লোকালের’ বিয়েতে আমি যাইনি। তারপর লোকালের এই সাজ। কিশোরকুমারের গান। সবমিলিয়ে কী যেন আমায় টানছিল! আমি ওকে বললাম;
‘হ্যাঁ রে…মায়ার কী হল?’
‘কেন? কী হবে? ও তো আমার বৌ?’
আমার কেন যে লজ্জা পায় না! আবার বললাম;
‘ বিয়ে হয়েছে তাহলে?’
ব্যাস ওর সেই খুশি। কে ওকে আটকায়! তরবর করে বলে চলল;
‘হ্যাঁ গো! কত লোক খাওয়ালুম। টেরেনের সবাই এসেছিল গো। মাংস, ডাল, রসগোল্লা…আইসকিরিম। মায়া লাল শাড়ি পরেছিল। রিতুপন্নার মত লাগছিল!’
দোকানে লোক বেশি ছিল না। তবুও এবার চারিদিকে দেখে নিয়ে খুব আস্তে বললাম;
‘ফুলশয্যা করেছিস?’
না জিভ কাটল না ‘লোকাল’। সেই একই ভঙ্গিমায় বলল;
‘ না গো! হয়নি।’
আমি একটু জোরেই বললাম;
‘কেন?’
‘শ্বশুর বলল যে! লোকাল শরীরটা খারাপ। স্টেশানে দোকানটা ফাঁকা পরে থাকবে? চোরডাকাতের উৎপাত। তুই গিয়ে শোগা যা! কী করি। ফুলশয্যার রাতে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু শ্বশুর বলছে! চলে গেলাম। হল না ফুলশয্যা। শ্বশুর ছিল আরও তিন বছর। শরীর আর ভাল হয়নি। তারপর থেকে দোকানটাকে পাহারা দেবে কে? সেখানেই শুতাম।’
‘ তাহলে শ্বশুর এখন নেই! তোরা দুজন শুধু?’
‘হ্যাঁ!’
‘তাহলে এখনই একদিন ফুলশয্যা করে নে…
চুপ করে গেল ‘লোকাল’। তারপর বলল;
‘কাকু আমি যাই!’
বাইরে তখন আগুন-বৃষ্টি।
সাত.
কিন্তু ‘লোকাল’ গেলে চলবে কী করে? পকেট থেকে প্যাকেট বার করে একটা সিগারেট দিলাম ওকে। নিজেও একটা ধরালাম। সিগারেট বিড়িতে ‘লোকাল’দের কো লজ্জা থাকে না। তারপর বললাম;
‘ হ্যাঁ রে…মায়া রোজ কিশোরের গান শোনে না? তাই কলকাতায় এসে আমাদেরও ঐ গান শোনাচ্ছিস?’
উত্তর দিচ্ছিল না ও। অথচ অনেকগুলো টাকা খরচা হয়ে গিয়েছিল আমার। আমি আবার বললাম;
‘ মায়া শুনছে কিশোরের গান?’
এবার মুখ খুলল চাঁদ;
‘ একদিন বললাম। মায়া, কিশোরের গান শুনবে না? ও তখন শংকরদার গলা জড়িয়ে খুব হাসছিল। বলল—দোতালা করে দাও। তারপর শুনব!’
এবার ঝটকা খেলাম আমি;
‘শংকরদাটা কে?’
‘শ্বশুরের ধর্মছেলে। লটারির দোকান ছিল গো স্টেশানে। ঐ তো লটারির নেশা ধরিয়ে শ্বশুরের সব খেল। দোকানটাও খেল!’
মনে পড়ল। শংকরের নাম শুনেছিলাম। লোকাল নেতার চ্যালা। পুলিসের খাতায় বেশ খ্যাতি আছে।
‘ তা তুই কী করলি?’
‘ আমি?…ঠাকুমা তো বিয়ের আগেই মরেছিল। ভিটেবাড়ি বেঁচে যা পেলাম তুলে দিলাম। দোতালা হবে। তারপর কিশোরের গান শোনাব মায়াকে।’
‘ দোতালা করতে কত লাগে জানিস?’
এবার যেন ‘লোকাল’ একটু ক্ষেপে গেল;
‘কাকু আমি ঠিক করে ফেলতাম…ফাস লোকাল থেকে লাস লোকাল অবদি কাজ করছিলাম। হয়ে যেত!’
কে বোঝাবে? থাক…কিন্তু গল্পটা বেশ রোমাঞ্চকর হয়ে উঠছিল। বললাম;
‘ হল না দোতালা? কেন?’
ও এবার উঠে পড়ল। বলল;
‘ না কাকু যাই। তোমাদের এখানে কাজ করতে এসেছি। অনেক খরচা। অনেক কামাতে হবে। আমি যাই।’
আমি বসেই বললাম;
‘কত টাকা দরকার রে?’
‘পাঁচ লাখ।’
পাঁচ লাখ? এই মূর্খ ভিখিরি জানে পাঁচের পর কতগুলো শূণ্য দিলে পাঁচ লাখ হয়! এ তো বিরাট রহস্য! দোতালা বলে ভিটেবাড়ি খেল। এখন আবার পাঁচলাখ বলে ওর সর্বস্ব খাবে? হয়ত বিক্রিই করে দেবে ওকে। কী করা যায়! কিন্তু বললে কী ও বুঝবে! ও যাইযাই করেই যাচ্ছিল। আমি বললাম;
‘ বস না! আরেক কাপ চা খা। আমিও খাব।’
চায়ের নামে এদের না নেই জানতাম।
চায়ের শেষে আবার সিগারেট দিলাম। তারপর মোলায়েম গলায় বললাম;
‘ কী করবি এত টাকা দিয়ে?’
‘মায়ার অপারেশান করতে হবে ।’
মায়ার অপারেশান! কিন্তু একটুও গলা কাঁপল না ওর।
‘কেন মায়ার কী হয়েছে?’
‘অপারেশান করলে ওর কান ঠিক হবে। ও এখন কিছুই শুনতে পায় না’
আমার পেটের ভেতর গুড়্গুড়ানি শুরু হল। কী করে চাপি! বললাম;
‘ কানে কী হল মায়ার?’
‘মাথাটা দেয়ালে খুব জোরে ঠুকে দিয়েছে না! প্রথমে তো দেখতেও পেত না। অনেক ডাক্তার দেখিয়ে একটু দেখতে পাচ্ছে। এখন ভেলোরে নিয়ে গেলে শুনতে পাবে। কিন্তু পাঁচ লাখ খরচা হবে।’
‘সে কি রে! কে এমন করে মারল মায়াকে?’
‘শংকরদা!’
মায়া আমার কেউ না। তবুও খুব রাগ হল। মনে হল শংকরকে পেলে ছিঁড়েই ফেলব। ভর দুপুরে চায়ের দোকানের মধ্যে চেঁচিয়ে উঠলাম;
‘শংকর? তা তোরা কী করছিলি?’
‘আমি কী করতে পারি…আমার এই চেহারা!’
কাঁদতে শুরু করল ‘লোকাল’। তারপর ফোঁপাতে ফোঁপাতে অনেক কিছু বলে গেল। আমি গুছিয়ে নিলাম। বিয়ের পর ও দেখত। মাঝমাঝেই শংকর আসত। মাংস আনত। মায়ার জন্য শাড়ি আনত। রাতে থেকেও যেত। মায়াও খুব খুশি হত। তাই ওরও খুব ভাল লাগত।
কিন্তু শ্বশুর মরে যাওয়ার পরে একদিন শংকরের সঙ্গে মায়ার ভয়ংকর ঝগড়া বেঁধেছিল। সে ঝগড়া কখন এবং কেন লেগেছিল লোকাল জানে না। গলির মুখ থেকে মায়া আর শংকরের চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। লোকজনের ভিড় ঠেলে বাড়ি ফেরত লোকাল যখন ঘরে ঢুকল তখন দুই রোগা হাতে শংকরের গলা টিপে ধরেছে মায়া। বলছে,
‘সব খেয়েছিস। ঘর, দোকান সব লিখে নিয়েছিস। খেতে না পাই , না পাই! ঐ পাগলটাই আমার সোয়ামি। যা আনে তাই খাব। তুই লাইনে নামাতে চাস ? পারবি না…’
ওদিকে মায়ার মাথায় গলগল করে কেরোসিন তেল ঢালছে শংকর আর বলছে, ‘ ছেনালের আবার জাত কী রে!করবি না? তোকে পুড়িয়ে মারব আজ’…..
লোকাল জাপটে ধরেছিল মায়াকে।আগুন লাগার সাথে সাথে মাটিতে ফেলে জলের ঘড়া পুরো ঢেলে দিয়েছিল মায়ার ওপর।
এখন মাঠের দিকে খাস জমিতে একটা ঝুপড়িতে মায়াকে নিয়ে লোকাল থাকে। শয্যাশায়ী মায়া সারাদিন চিৎকার করে। কখনও লোকালকে বলে,
‘তোর মত অনামুখোকে বিয়ে করে আমার এই অবস্থা। চলে যা, ছেড়ে চলে যা আমায়’
আবার কখনও ভগবানকে ডাকে ‘ পাপ করেছি ঠাকুর। একটা সরল লোককে ঠকিয়েছি। আমায় তুলে নাও।’।
শংকর এখনও ওদের ছাড়েনি। ইউনিয়ানে হুমকি দিয়ে ট্রেনে ‘লোকালের’ গান গাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। একদিন একা পেয়ে বলেছে লোকালকে;
‘ ওকে ছেড়ে চলে যা। মাগিটাকে আমি লাইনে নামাবই। চামকি মেয়েছেলে। ঝাক্কাস ব্যবসা করবে। চলে যা! নাহলে জানে মেরে দেব…’
বাধ্য হয়ে কলকাতায় আসছে লোকাল। গোপালের মূর্তির জন্য একটা পাতলা সোনার বালা গড়িয়েছিল ওর ঠাকুমা। সেটা বিক্রি করে এই টুপি, জামা, জুতো। আর বাকিটা দিয়ে এখনও পর্যন্ত মায়ার চিকিৎসা চলছে।
নয়.
এত পর্যন্ত শুনে আমি আর ভদ্রলোক হয়ে থাকতে পারলাম না বলে ফেললাম,
‘ ওরে টাকাটা যদি জোগাড়ও হয়। ভাল হয়ে ঐ মায়া আবার শংকরের সাথে মিশে যাবে। আবার ঠকাবে তোকে। আর তা যদি নাহয়। শংকর তো মার্ডার করে দেবে তোকে। এসব ছাড়!’
ইটভাটার ফায়ার বার্স্ট দেখেছিলাম অনেকদিন আগে। আজ আরেকবার ‘লোকালের’ চোখে তাই দেখলাম;
‘ বলল আর হয়ে গেল। এবার শংকরকে ছাড়ব না। আমারও পার্কসার্কাসে বন্ধু আছে। ওরা বলেছে। মেশিন দেবে। দানা দেবে।’
‘তাহলে লাইন ছেড়ে পালিয়ে এলি কেন?’
‘কী করব? মায়া দিব্যি দিল যে!’
আমার মুখে আর কোন কথা আসছিল না। জানতাম হবে না। তবুও শেষ চেষ্টা করলাম একটা। যদি হনুমানটাকে বাঁচানো যায়;
‘ ওরে মায়ার মত মেয়েরা ডাইনি হয় রে। বাঁচতে চাইলে পালা।’
আরেকবার ইটভাটার আগুন জ্বলে উঠেই নিভে গেল। কেন যে ও আমায় এত সমীহ করত! আমার হাতদুটো জড়িয়ে ধরল ‘লোকাল’
‘ ওকে কিশোরের গান শোনাতে না পারলে মরে যাব কাকু!’
বিনা মেঘে এই মধ্য জৈষ্ঠ্যের দুপুরে কী বজ্রপাত হল? সারা শরীর নিয়ে আমি কেঁপে উঠলাম।আমার কী বলছি? আর ও কী উত্তর দিচ্ছে ? আমার তীক্ষ্ণ চিন্তাগুলো থেমে থেমে আমার মাথায় রক্তপাত ঘটাচ্ছিল অথচ লোকাল থামছিল না,
‘ লোকে বলে। আমার সামনেই বলে-আমি দেড়ফুটিয়া। তা ভাল! দেড়ফুটিয়াদের কী চোখ-কান থাকে না? শংকরদা আর মায়ার মধ্যে কী ছিল আমি সব জানতাম। আমি ছিলাম ওদের কাছে মুরগি আর আমার ভিটেবাড়িটা ছিল আস্ত রাজভোগ। আমার এই গেঁড়ি-গুগ্লির মত চেহারা কি মায়ার পছন্দ হতে পারে? ও তো আমায় নিয়ে মজা করবেই।’
এবার নিজেই আমার কাছে একটা সিগারেট চাইল লোকাল। স্টিম ইঞ্জিনের মত ধোঁয়ার স্রোত ভাসিয়ে দিল তপ্ত ঘরটায়। তারপর অজান্তেই নিজের গলার ময়লা তুলসীর মালাটায় হাত দিল লোকাল। সামান্য মুচকি হেসে বলল,
‘আমার তো মা ছিল না আর ঠাকমা বুড়ি গোপাল,পুতুনা,কালিনাগ ছাড়া কোনো গল্প জানত না। তাই কারুর মুখে আমি পরীর গল্প শুনি নি। কিন্তু ক্লাস থিরির বাংলা বইতে একটা ছবি ছিল।একঢাল কোঁকড়া চুল, ফ্রকপরা,কাজলে্র টিপ কপালে ছটফটে একটা মেয়ের ছবি। আমার মন বলত পরীরা অমন হয়। জান কাকু! আমি তখন ‘লোকাল’ না, দয়াল দাস। মাথায় টিকি গেরুয়া পরে বাবার সাথে গাঁয়ে গাঁয়ে গোপালের গান গেয়ে বেড়াতাম। আগেই বলেছি মায়া আমাদেরই গ্রামের মেয়ে। তো, মায়া পরী হত! জান… মাঝে মাঝে ঐ পরী হয়ে পেছন থেকে আমার টিকি ধরে মারত টান। টাল সামলাতে না পেরে আমি পরে যেতাম। তারপর খিলখিল করে হেসে হাততালি দিতে দিতে পালিয়ে যেত। পরীটাকে ছুঁতে কী যে ইচ্ছা করত! আস্তে আস্তে সেটাই আমার স্বপ্ন হয়ে গেল।…তারপর একদিন সত্যি হোক, মিথ্যে হোক সেই পরী গান শুনতে চাইল । আমি শোনাব না? সে ছলনা করে করুক। আমি সুযোগের আশায় থাকব কাকু। একদিন গান শোনাবই।’
একটু থেমে আবার বলল—
‘ আগে তো গাইনি। এখন শুধুই কিশোরের গানই গাইছি । শেখা হয়ে যাচ্ছে। যখন কান ঠিক হয়ে যাবে তখন সেই গান শুনে মায়া নিশ্চই খুব মজা পাবে, কী বলুন কাকু?’
অনেকটা সময় টান না দিলে সিগারেটে নিভে যায়। ‘লোকালের’টাও নিভে গিয়েছিল। টোকা মেরে দোকানের বাইরের ফুটপাথে ও সেটা ফেলে দিল । তারপর আমার দিকে একদৃষ্টে কিছুটা সময় তাকিয়ে থাকল। দেখলাম ওর চোখে জলের কোন চিহ্ন নেই।
‘ আমার ঐ ঝুপড়ির পাশে গাছ লাগিয়েছি। একটা টগর আর একটা শিউলি । মায়া ঠিক হলে পর একদিন রাতের বেলায় বিছানার ওপর টগর আর শিউলি ছড়িয়ে দেব। তারপর ওকে কিশোরকুমারের গান শোনাব। সেটাই তো ফুলশয্যা হবে, ঠিক কি না, বলুন?’
এরপর আচমকা বাঁহাতে বাধা একটা সস্তার ইলেক্ট্রনিক ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
‘ওরে বাবা! আর দাঁড়ালে হবে না। এবার যাই কাকু। আশীর্বাদ করবেন। ’
একটু জোরেই ওর নিজের ভঙ্গীতে দুলতে দুলতে চলে গেল লোকাল।
দশ.
বাইরে আগুনে হাওয়ার দাপট আরো বেড়েছে। ভয় লাগছে। বেরোতে ইচ্ছা করছে না। প্রায় ফাকা দোকানের ভিতরেই বসে আছি। আরো কিছুটা গিয়ে মার্কেটিং চেন থেকে একটা ‘হোম ফেসিয়াল ফর উওম্যান’ কিনতে হবে। বিকেলে বন্ধুর বিবাহ বার্ষিকী। ফেসিয়াল না কিনতে পারলে তুলকালাম হবে। ভাবতে বসলাম কী বলা যায়! দোকান বন্ধ নাকি ডেলিভারি নেই। এই গরম আর সহ্য করা যাচ্ছে না। হঠাৎ কানে ভেসে এল।
‘প্যার দিবানা হোতা হ্যায় তো…আরকানা যাতা হ্যায়…’
মাঝে মাঝে সেই জয়েন্ট পেরোনোর ঝাঁকুনি।কেন জানি না আমার আর কোনো কিছুই চিন্তা করতে আর অসুবিধা হচ্ছিল না। লোকালের গান ধাক্কা খাচ্ছিল। ধাক্কা খাচ্ছিল রাস্তা থেকে সবকটা গলিতে…গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে টপ ফ্লোরের প্রতিটা দেয়ালে, বন্ধ দরজা আর জানালার পাল্লাগুলোতে। বার বার ধাক্কা খেতে খেতে হারিয়ে যাচ্ছিল। ভাজাপোড়া কলকাতার ধোয়াটে আকাশে হারিয়ে যাচ্ছিল।
লেখক পরিচিতি : রাজেশ ধর, প্রধানত একজন গল্পকার।নিয়মিত গল্প লিখেন। নদী তাঁর ভীষণ প্রিয়। তাঁর লেখাতেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। নদীর দুঃখ যেন তাঁরই দুঃখ। প্রকৃতির সুরক্ষায় নিবেদিত একজন মানুষ তিনি। নিজ দেশের সিমানা পেড়িয়ে নিজেকে একজন বিশ্ব নাগরিক ভাবেন। যুক্ত আছেন কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকার সঙ্গে। বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন নরসুন্দা ডট কম এর উপদেষ্টা সম্পাদক (ভারত) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।