অসীম আচার্য্য’র দুটি কবিতা
।। কাব্যিতা- ৪১ ।।
তোমার জন্য রাত জেগে জেগে
নিপাতনে সিদ্ধ হয়েছে সন্ধি
স্বরে-ব্যঞ্জনে, ব্যঞ্জনে-স্বরে গায়ে লেগেছে
পাগলা-মাতাল হাওয়া
বর্ষার মেঘদূত রানারের মতো
রাত ভোর করে বয়ে এনেছে খবর
রহমত মিয়ার ডিঙি একদিন একলা পড়ে রবে ঘাটে
সেই প্রত্যাশায় কতবার সজিব হয়েছে
আমাদের তেপান্তরে গমনের অভিপ্রায়।
বর্ষা আসে বর্ষা যায়
ঘনঘোর বরিষণে ভেসে আসে কদমের ঘ্রাণ
অরণ্য নেই, তবু ভিজে যায় বৃক্ষের ছায়া
তোমার আঁচলের আড়াল থেকে ডাকে না টেলিফোন
আমার চিলেকোঠায় জমা হয় স্মৃতির প্রায়শ্চিত্ত!
চারপাশে এই যে জল, বন্যা-বন্যা আর্তনাদ
ভেসে যায় গৃহস্থের চালাঘর, কৃষকের শস্যভাণ্ডার
ট্রেনযাত্রায় তুমি যখন পরিচিত স্টেশনে দাঁড়াও
ভিজে যায় তোমার পায়ের পাতা,
তবু জলের ভাঁজে-ভাঁজে নতুন জল
বয়ে আনে রূপোর সিকি-আধুলি
হেসে ওঠে অভাবী কৈবর্তপাড়া
একদিন নতুন করে গৃহস্থ বাঁধে ঘর
ভাঙনের গান শেষে নদীর বুকে চর জাগার মতো
কৃষকের চোখে জেগে উঠে স্বপ্ন
শুধু রহমত মিয়ার ডিঙি ভীড়ে না ঘাটে
শুধু আমাদের তেপান্তর যাত্রা স্থবির হয়ে থাকে…!
।। আদিম আষাঢ়ে ।।
ঢেঁকিছাটা চাল ধুয়ে ছুঁয়ে দাও চোখ
চোখ থেকে নেমে আসুক ক্রমাগত প্রেম
আষাঢ়ের ভালোবাসা বিলিয়ে দিলাম
কদমে ভরিয়ে দাও দেহের হেরেম
মখমলে শুয়ে আছে ক্ষুধার গোলাপ
মালিও রমনীক্রিয়া ফোটায় ভালো
জগতের দেহলীলা আদিম পুকুরে
বৃষ্টির মতো ঝরে সরল-কালো
মৃদঙ্গ বলো যদি বাজাতে জানো
বাজাও আমারে সখি, জনমের সাধ
দু হাতের ছোঁয়া দাও অমর হবো
অরণ্যে ঝুলে থাক নাশপাতি-চাঁদ।