মাজহার মান্না : অদৃশ্য এক অণুজীব আমাদের দৃশ্যত প্রকৃতির সবকিছু ওলটপালট করে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে এর সংক্রমণ। বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ায় থামিয়ে দিয়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন। সরকারের পক্ষ থেকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ভাইরাস মোকাবেলায় ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম। বদলে গেছে চিরচেনা রূপ। থমকে গেছে দেশের আইন আদালতের কার্যক্রম। শুধু আইন-আদালত নয়, দেশের সার্বিক কর্মকান্ড বর্তমানে স্থবির হয়ে পড়েছে। করোনা সংক্রমণের লাগাম টানতে ছুটি দফায় দফায় বেড়েই চলছে। এই পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে সেটাও বলা যাচ্ছে না। এই প্রথম এতো লম্বা সময় আদালতে অনুপস্থিত থাকায় আইনজীবীদের আয় রোজগার হচ্ছে না। এতে করে পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা খুবই কষ্টে দিনযাপন করছেন।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে আদালতের কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধের ফলে আইনজীবীদের মাঝে একধরনের দুশ্চিন্তা কাজ করছে। এমন অনেক আইনজীবী আছেন যাদের মাসের আয় মাসেই ফুরিয়ে যায়। এ অবস্থায় তারা রয়েছেন চরম বিপাকে। একজন আইনজীবীর উপার্জনের একমাত্র উৎস বিচারপ্রার্থী মানুষকে আইন সেবার মধ্যদিয়েই তার পেশাজীবন। কিন্তু বর্তমান মহামারীতে নবীন আইনজীবীর পাশাপাশি অনেক প্রবীণ আইনজীবীরাও সমস্যায় রয়েছেন।
অনেক আইনজীবী শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে জীবন যাপন করছেন। তাছাড়া এই পেশাজীবীর উর্পাজনের বড় অংশ বাড়ি ভাড়ায় চলে যায়। না খেয়ে কেউ মারা যাবেন না হয়তো। কিন্তু বাড়ি ভাড়া না দেয়ার কারণে এই দুঃসময়ে অনেকেই ঘরছাড়া হবেন। কিংবা বড় ধরনের ঋণে জড়িয়ে যাবেন।
বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আইনজীবী সমিতি এবং ট্যাক্সেস বার এসোসিয়েশন বা কর আইনজীবী সমিতিগুলোর প্রতি বিচ্ছিন্নভাবে আইনজীবীদের বিষয়ে কিছু করার দাবি উঠেছে। সাধারণ ফান্ড গঠন করে তা থেকে ঋণ কার্যক্রম চালু করার। যা পরিবেশ স্বাভাবিক হলে ওই আইনজীবী তার সুবিধা মতো পরিশোধ করে দেবেন। সমিতির বেনাভোলেন্ট ফান্ডে হাত দেয়ার সুযোগ কম। কেননা তাতে হাউজের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। এ ক্ষেত্রে যারা আইনজীবীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারাও এই দুঃসময়ে এগিয়ে এসেছেন।
মাজহার মান্না’র আরও লেখা পড়ুন…
করোনায় চার দেয়ালে বন্দী শিশুর জীবন!
কোয়ারেন্টিনের দিনলিপি ।। মাজহার মান্না
মহামারী করোনা ও গণমাধ্যমকর্মীদের হাহাকার : মাজহার মান্না
দেশের অনেক জায়গায় বার সমিতির পক্ষ থেকে প্রত্যেক আইনজীবীর জন্য বৈশাখী ভাতা ও আসন্ন ঈদ উপলক্ষে এককালীন (অফেরতযোগ্য) প্রণোদনা দিয়েছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। বিপরীতে অনেক বার সমিতি আইনজীবীর জন্য যে পরিমাণ ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে অনেকে সোস্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
তাদের মতে, দুর্দিনে পাশে না দাঁড়ালে এ সমিতি আর কেন? আর এই টাকা তো কারও পকেট থেকে দেয়া হচ্ছে না। আইনজীবীদের টাকা আইনজীবীকে দেবে। এ বিষয়ে উর্বর মানসিকতা দেখাতে কেন এতো গড়িমসি, এটা বোধগম্য নয়। তাদের চাওয়া দুর্দিনে অধিকারের সম্মানের প্রাপ্যটুকু। যেটি সংকোচ ছাড়াই আইনজীবী মাত্রই গ্রহণ করতে পারেন।
আইনজীবীদের আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে বার সমিতিগুলো বিভিন্ন মেয়াদে আইনজীবীদের বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করেছে। আর এতে করে দুর্দিনে অসচ্ছল আইনজীবীদের কিছুটা হলেও দুঃখ মুছবে। করোনা সংক্রমণের বিস্তার যত তাড়াতাড়ি প্রতিরোধ করা সম্ভব, তত সবার জন্য স্বস্তির। তাহলেই আইন-আদালত খুলবে। তাই আসুন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি, কোয়ারেন্টাইনে থেকে নিজে সুস্থ থাকি, অন্যকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করি। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ ও সুন্দর থাকুন।
মাজহার মান্না: সাংবাদিক-লেখক ও কর আইনজীবী, কিশোরগঞ্জ।