পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪৫০ কোটি বছর। রেডিওমেট্রিক পদ্ধতিতে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর এ বয়স নির্ণয় করেছেন। আঠার হাজার মাখলুকাতের এই পৃথিবীতে মানুষ বসবাস করছে সৃষ্টির শুরু থেকে। দ্বাবিংশ শতাব্দিতে এসে মানুষকে বাস করতে হবে (হচ্ছে) করোনার সাথে আজ একথাও বিশ্বাস করতে হচ্ছে। জি, ভুল পড়েন নি। বিজ্ঞান ও বিধুষীগণ তাই বলছেন। তবে সেটা অনন্তকাল কিংবা শতাব্দিকাল না হলেও অন্তত ৪০ থেকে ৫০ বছর হতে পারে।
নিউইয়র্ক শহরে ১৯১৬ সালে পোলিও আক্রান্ত হয়ে ৬ হাজার শিশু মারা যায়। এর প্র্রায় ৩৪ বছর পরে ১৯৫০ সালে জোনাস সাল্ক পোলিও টিকা আবিষ্কার করেন। চিকেন ফক্স ১৯৫৩ সালে প্রথম শনাক্ত হলেও টিকা আবিষ্কৃত হয় ৪২ বছর পর ১৯৯৫ সালে। অনুরূপভাবে ইবোলা ১৯৭৬ সালে প্রথম শনাক্ত হয় কিন্তু টিকা আবিষ্কার হয় ৪৩ বছর পর ২০১৯ সালে। পরিসংখ্যাণ বলছে টিকা আবিষ্কারের সময়কাল সাধারণত দীর্ঘ হয়। সমগ্র্র পৃথিবীর বিজ্ঞানীগণ নিজস্ব উদ্যোগ বা সরকারি-বেসরকারি অর্থায়নে এসব টিকা আবিষ্কার করে থাকেন।
১৯৪৭ সালে শনাক্ত হওয়া জিকা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে দীর্ঘ ৭৩ বছর ধরে বিজ্ঞানীরা গবেষণারত। শুধু তাই নয়, ১৯৮১ সালে শনাক্ত হওয়া এইডস, ২০১২ সালে শনাক্ত হওয়া মার্স ভাইরাসের টিকা যথাক্রমে ৩৯ ও ৮ বছর ধরে গবেষকগণ গবেষণারত। এমনকি ২০০৩ সালে শনাক্ত হওয়া সার্স ভাইরাসের টিকার গবেষণা দীর্ঘ ১৭ বছর পর ক্যানসিলড করা হয়েছে। বৈশ্বিক ভ্যাকসিন বা টিকা শিল্পে বড় নাম ফিজার, মার্ক, গ্লাক্সোস্মিথ, স্যানোফি এবং জনসন অ্যান্ড জনসন। দু’একটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বর্তমান করোনা মহামারীতে এদের কেউ-ই এখনো এগিয়ে আসেনি।
পড়ুন নরসুন্দা ঈদ সংখ্যা
সম্পাদকীয় ।। ফয়সাল আহমেদ
রাজপুত্তুরের গল্প ।। সোমেন চন্দ
তবুও বাঙালি ।। তাপস দাস
কাক ।। অনিন্দ্য আসিফ
মানুষের প্রধান প্রধান চাহিদাগুলোর মধ্যে রয়েছে বিত্ত-বৈভব, যৌনকর্ম ও ক্ষমতা। মানুষ সভ্য হওয়ার সূচনা লগ্ন থেকেই অবিরাম ছুটে চলছে ক্ষমতার পিছু পিছু। যার জন্য পৃথিবীকে মাঝে মাঝেই হতে হয় ক্ষত-বিক্ষত, কাঁদতে হয় হিরোসিমা কিংবা নাগাসাকি’র মতো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারত, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক ও জার্মানীর মতো দশ-বিশটি দেশ পেয়েছে বিশ্বের অসীম ক্ষমতাধরের তকমা।
চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান, জার্মানী, কাতার, লুক্সেমবার্গ, সিঙ্গাপুর, নরওয়ে, হংকং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডের মতো অনেক দেশ বিত্ত বৈভবে হয়েছে সমৃদ্ধ। অর্থনৈতিক ও সামরিক পরাশক্তিসহ সকল দেশ-ই করোনার কাছে হয়েছে ধরাসায়ী। ধূলোয় মিশে গেছে তাদের দাম্ভিকতা।
শিল্পোন্নত দেশের তালিকাও কম বড় নয়। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশই শিল্পে প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে। নিমিষেই পৃথিবীর এপ্রাপ্ত থেকে ওপ্রান্তে ছুটে বেড়ানোর জন্য তৈরি করেছে উড়োজাহাজ, দ্রুতগামী বিমান কিংবা রেল। গ্রহ থেকে গ্রহে পরিভ্রমণ করার জন্য তৈরি করেছে সুপার গতিসম্পন্ন অত্যাধুনিক রকেট।
মানুষের প্রয়োজনে এবং জ্ঞান পিপাসা মিটাতে তাদের চেষ্টা ও সফলতার কমতি নেই। কিন্তু অত্যন্ত দু:খের সাথে বলতে হচ্ছে, প্রযুক্তি বিশ্বে সাড়া জাগানো এই সব দেশও কিন্তু এমূহুর্তে কোন পথের সন্ধান দিতে পারছে না। তারা পারছে না হতাশা আর শঙ্কিত মানব সম্প্রদায়কে করোনা মহামারি থেকে বাচাঁতে।
এটম আর পারমানবিক বোমার দাম্ভিকতা আলোচিত হয়েছে সারা বিশ্বজুড়ে। ধ্বংসলীলা দেখেছে পৃথিবীর কোন কোন প্র্রান্ত। যেমনটি হরহামষাই ঘটে বোয়াল আর টাকি মাছের মধ্যে। বিশাল পাহাড় পর্বত নিমিষেই ধ্বংস করে দিতে পারে পারমানবিক শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো। এজন্যই পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলোকে বিভাজন করা হয়েছে উন্নত, উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত এই তিনটি শ্রেণিতে। কিন্তু করোনার কাছে আজ হার মানছে শ্রেণি ভেদাভেদ, দুর্বলতা আর দাম্ভিকতা। এখন পর্যন্ত পৃথিবীজুড়ে কেউ সফল হতে পারেনি আণুবীক্ষণিক এই করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে। মানুষকে বাধ্য হয়েই মেনে নিতে হচ্ছে করোনার সাথে বসবাস।
লেখক: মনির হোসেন, ডাটা কন্ট্রোল সুপারভাইজার, আইসিটি ডিভিশন, প্রধান কার্যালয়, জীবন বীমা কর্পোরেশন, ঢাকা।
আরও পড়তে পারেন…..
বিশ্ব পরিবেশ দিবস: জীববৈচিত্রের উদযাপন
একটি হাতির মৃত্যু ও আমার কিছু কথা- অনুপ হালদার