যুক্তরাষ্ট্রে চার দশক ধরে ৯০ জনকে হত্যা করেছেন বলে স্বীকারোক্তি দেয়া একজন কারাবন্দী খুনির তদন্ত চলছে। এফবিআই মনে করছে, স্যামুয়েল লিটল নামে ৭৮ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি মার্কিন অপরাধের ইতিহাসে সিরিয়াল কিলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে।
প্রাদেশিক এবং কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি তার স্বীকারোক্তিতে দেয়া তথ্যের সাথে ১৯৭০ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত যে ডজন ডজন নারী হত্যার ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর সাথে খতিয়ে দেখছে।
তদন্তকারীরা বলছেন এরইমধ্যে ৩৪টি হত্যার ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে এবং আরও অনেকগুলোতে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিশ্চিত কিনা, তা জানতে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন তারা।
লিটল তিনজন নারীকে হত্যার দায়ে ২০১৪ সালে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর কারাভোগ করছেন।
২০১২ সালে কেন্টাকিতে গৃহহীনদের একটি আশ্রয়-শিবির থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ক্যালিফোর্নিয়াতে স্থানান্তরিত করা হয়।
১৯৮৭ এবং ১৯৮৯ সালে নিহত তিন নারীর মৃত্যুর রহস্য উদঘটিত না হওয়ায় জড়িত থাকার সন্দেহে মি লিটল এর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ওই তিনজন নারীর প্রত্যেককে প্রচুর মারধোর করা হয়েছিল এবং তাদের দেহ আলাদা আলাদাভাবে ফেলে দেয়ার আগে শ্বাসরোধের চিহ্ন পাওয়া হয়েছিল।
অারো পড়তে পারেন…
রাজনীতি ছাড়া দেশের উন্নয়ন জোরালোভাবে সম্ভব নয় : মাশরাফি মুর্তজা
বিচারের সময় তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন, কিন্তু শেষপর্যন্ত প্যারোলের কোন সুযোগ না রেখে তাকে টানা তিন-দফা যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ দেয়া হয়।
এর আগেও তার ব্যাপক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের রেকর্ড ছিল, যার মধ্যে ধর্ষণ এবং সশস্ত্র ডাকাতির অভিযোগও ছিল।
এই অপরাধ স্বীকারোক্তির পর লিটল’কে এফবিআইর সহিংসতা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বিষয়ক একটি প্রকল্পে পাঠানো হয় যেখানে এ ধরনের সিরিয়াল কিলারদের সহিংসতা এবং যৌন অপরাধের বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে এবং ভবিষ্যতে অমীমাংসিত অপরাধের রহস্য-জট খুলতে স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে তথ্য শেয়ার করা হয়।
এই প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, তখন তারা “বিপজ্জনক একটি ধরন” এবং মার্কিন মুল্লুক-জুড়ে এ ধরনের আরও হত্যার সাথে “যোগসূত্র” খুঁজে পান।
টেক্সাসের ওডিসিতে একটি অমীমাংসিত ঠাণ্ডা মাথায় সংঘটিত খুনের মামলা, যেখানে ডেনিস ক্রিস্টির স্বজনরা তখন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ওপর চড়াও হয়।
স্থানীয় একজন রেঞ্জার জেমস হল্যান্ড তখন ক্যালিফোর্নিয়া যাচ্ছিলেন ভায়েলেন্ট ক্রিমিনাল অ্যাপ্রিহেনশন প্রোগ্রাম বা ভাইক্যাপের দলের সদস্যদের সাথে, মি লিটল এর সাক্ষাতকার নিতে।
তারা জানায়, লিটল তাদের সাথে কথা বলতে রাজি হন কারণ তার উদ্দেশ্য ছিল জেলখানা থেকে বের হওয়া।
এফবিআই বলছে, লিটল সর্বমোট ৯০টি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে- যার বিস্তৃতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে মেরিল্যান্ড পর্যন্ত।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভাইক্যাপ দলের মেম্বাররা বলেন, তারা অন্তত ৩৪টি হত্যার ব্যাপারে স্পষ্ট ভিত্তি খুঁজে পেয়েছে, আরও অনেকগুলোর নিশ্চয়তা পাওয়া বাকি রয়েছে।
মে মাসের ওই সাক্ষাতকারে রেঞ্জার হল্যান্ডকে তিনি প্রতিটি জায়গায় কতজনকে হত্যা করেছেন তাদের সংখ্যা জানান। যেমন “জ্যাকসন মিসিসিপিতে একজন, সিনসিনাটি, ওহাইওতে একজন, ফিনিক্স,অ্যারিজোনায় তিনজন, লাস-ভেগাস, নেভাডায় একজন “।
তাদের ধারনা মি. লিটল বিশেষ করে প্রান্তিক এবং দরিদ্র নারীদের টার্গেট করতেন, তবে তাদের অনেকেই পতিতাবৃত্তির সাথে জড়িত কিংবা মাদকাসক্ত ছিল।
তদন্তকারীরা বলছেন, তাদের মরদেহ প্রায়ই অজ্ঞাত পরিচয় হিসাবে ফেলে যাওয়া হতো এবং তাদের মৃত্যু তদন্তহীন থেকে যেত। এফবিআই বলছে ৭৮বছর বয়সী এই বুড়ো “খারাপ শারীরিক অবস্থার মধ্যে” আছেন এবং সম্ভবত তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত টেক্সাসের কারাগারেই থাকতে হবে। ওডিসি হত্যার ঘটনার স্বীকারোক্তির পর ক্যালিফোর্নিয়া থেকে তাকে সেখানে নেয়া হয়।
ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো বলছে, তারা রেঞ্জার হল্যান্ডের পাশাপাশি কাজ করছে যিনি কিনা “প্রায় প্রতিদিনই” লিটলের সাক্ষাতকার নিচ্ছেন। উদ্দেশ্য, সংঘটিত অপরাধের সঠিক এবং পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে আনা।
“এই ঘটনার ক্ষেত্রে সবচে বড় যে শিক্ষাটি সেটি হল তথ্য বিনিময়ের শক্তি বা ক্ষমতা”-এফবিআই রিপোর্টে এমন মত দিয়েছেন একজন অপরাধ বিশ্লেষক । সূত্র: বিবিসি বাংলা।