ফিচার

আসুন জেনে নেই মনের শান্তির জন্য আমরা কী কী করতে পারি

নরসুন্দা ডটকম   মে ২১, ২০২০
মনের

মনের শান্তির বিষয়টা একেকজনের কাছে একেক রকম। কেউ একা নিজের মতো থাকতে পছন্দ করেন, আবার কেউ অনেকের মাঝে থাকলে ভাবেন তিনি শান্তিতে আছেন। আমরা কতটুকু শান্তিতে থাকতে চাই তা অনেকাংশেই আমাদের নিজেদের উপর নির্ভর করে। ব্যস্ততায় ভরা জীবনে যখন একটুও দম ফেলার সময় নেই, তখন কিছু সহজ উপায়ে আমরা আমাদের মানসিক শান্তি ধরে রাখতে পারি। আসুন এগুলো সম্পর্কে জেনে নেই।

১. নেতিবাচক কথোপকথন এবং নেতিবাচক মানসিকতা সম্পন্ন লোকেদের থেকে দূরে থাকুন। সেইসাথে খারাপ বা মন্দ চিন্তা করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন।

২. সংবাদপত্র পড়া বা টিভিতে খবর দেখার সময় কমান। সংবাদপত্রে প্রকাশিত বা টিভিতে সম্প্রচারিত অধিকাংশ খবর নেতিবাচক। যা আপনার মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। ফলশ্রুতিতে হয়তো আপনি নিজের অজান্তেই চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন বোধ করেন।

৩. ক্রোধ বা রাগ কে সংযত করুন। সবকিছু ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না। ভুলে যেতে এবং ক্ষমা করতে শিখুন। অসুস্থ অনুভূতি এবং অভিযোগ আপনাকে কষ্ট দেয় এবং ঘুমের অভাব ঘটায়। মানসিক চাপ তৈরি করে।

৪. হিংসা থেকে দূরে থাকুন। ঈর্ষা করার মানে হল আপনার আত্মসম্মানবোধ কম, আর তাই নিজেকে অন্য কারোর চেয়ে নিচু বা নিকৃষ্ট মনে করেন। মনে রাখবেন হিংসা মানসিক অশান্তি তৈরি করার অন্যতম কারণ।

৫. মেনে নিতে শিখুন। যা আপনার সাধ্যের বাইরে অথবা পরিবর্তন করা যাবে না তা মেনে নিন। এটি অনেক সময়, শক্তি এবং উদ্বেগ সংরক্ষণ করে । প্রায়শই আমরা অনেক পরিস্থিতি/ সমস্যার সম্মুখীন হই যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যদি আমরা তাদের পরিবর্তন করতে পারি তবে এটা ঠিক আছে, কিন্তু এটা সবসময় সম্ভব নয় । আমাদের অবশ্যই এই ধরনের পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়া শিখতে হবে এবং তাদের গ্রহণ করতে হবে।

৬. অতীতে বসবাস করবেন না। অতীত মানে হচ্ছে পূর্ববর্তী সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা, যার অস্তিত্ব বর্তমানে নেই। অতীত থেকে কেবল শিক্ষা অর্জন করুন। অতীতের কোনো স্মৃতি আপনার মানসিক অশান্তির কারণ হলে তা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করুন। অর্থাৎ অপ্রিয় স্মৃতি সমূহ হতে দূরে থাকুন।

৭. বর্তমানকে প্রাধান্য দিন। বর্তমানের প্রতিটি মুহূর্তকে উদযাপন করুন। সময়ের সঠিক ব্যবহার করুন।

৮. পরিবার, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, সহ-কর্মী এবং বাকি সবার সাথে সুন্দর ও স্বাভাবিক আচরণ করুন। তাদের সম্মান করুন, ভালবাসুন। তবে অবশ্যই নেতিবাচক মানসিকতাসম্পন্ন দের থেকে যথাসাধ্য দূরত্ব বজায় রাখুন।

৯. ধৈর্যশীল এবং সহনশীল হোন। ধৈর্য একটি মহৎ গুন, যা সবার মধ্যে থাকেনা। এটি আপনাকে জীবনের সুউচ্চ স্তরে পৌঁছে দিতে পারে।

১০. নমনীয় হোন। মনে রাখবেন নমনীয় আচরণ করার মানে এই নয় যে আপনি কারো সামনে নত হয়ে যাচ্ছেন বা যাবেন। আপনার সাবলীলতা অনমনীয়তা আপনার মধ্যে প্রশান্তি এনে দেবে।

১১. আপনার মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন । মনকে নিয়ন্ত্রণ করা শিখে গেলে আপনি সহজেই উদ্বেগ এবং উদ্বিগ্নতা প্রত্যাখ্যান করতে পারেন, নেতিবাচক চিন্তা থেকে সহজে বিরত থাকতে পারবেন।

১২. নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। পুষ্টিকর খাবার ও পর্যাপ্ত পানি পান করুন। মনে রাখবেন, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।

১৩. বেড়াতে যান। সপ্তাহে অন্তত একদিন প্রকৃতির সংস্পর্শে সময় ব্যয় করুন এবং মাসে কমপক্ষে একদিন ভিন্ন কোনো পরিবেশ থেকে ঘুরে আসুন।

১৪. মনকে শান্ত ও ফ্রেশ করার একটি অন্যতম উপায় হচ্ছে মেডিটেশন (ধ্যান)। সম্ভব হলে নিয়মিত মেডিটেশন করুন। তবে এটি সহজসাধ্য নয়। যদি চেষ্টা করতে ইচ্ছুক থাকেন এবং সময় বের করে নিতে পারেন তবে দিনের এই মাত্র কয়েকটি মিনিট আপনার জীবনে পার্থক্য সৃষ্টি করবে।

১৫. নিজেকে সময় দিন। যা আপনার পছন্দ নয়, তা থেকে দূরে থাকুন। যার সাথে কথা বলতে আপনি পছন্দ করেন না বা অস্বস্তি বোধ করেন তাকে এড়িয়ে চলুন।

১৬. নিজেকে প্রাধান্য দিন। নিজের সিদ্ধান্ত নিজে গ্রহণ করুন। লোকে কি ভাববে তা তাদের ভাবতে দিন।

১৭. না বলতে শিখুন। অনুরোধের ঢেঁকি গিলতে যেয়ে সেধে চাপ নিতে যাবেন না। এতে মানসিক অশান্তি তৈরি হবে।

১৮. ভবিষ্যৎ নিয়ে অতি উদ্বিগ্ন হওয়া বন্ধ করুন। দুশ্চিন্তা না করে পরিকল্পনা করুন এবং সে অনুযায়ী অগ্রসর হোন।

১৯. প্রত্যাশার চাপ খুবই ভয়ানক। তাই অতিরিক্ত প্রত্যাশা (expectation) করবেন না।

২০. পর্যাপ্ত ঘুমানোর চেষ্টা করুন। যেকোনো দুঃশ্চিন্তা, চাপ বা অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে ঘুমের কোনো বিকল্প হয় না। মানসিক অস্থিরতা কমাতেও ঘুম খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তো আর চিন্তা কিসের ? উপরোক্ত কৌশলগুলোকে রপ্ত করে ফেলুন আর জীবনে স্বস্তি নিয়ে আসুন। একটাইতো জীবন ! খামাখা চাপ নিয়ে জীবনটাকে কেন কষ্ট দেবেন? আত্মার শান্তিতেই আপনার শান্তি ! শুভ কামনা আপনার জন্য।

সূত্র: লাইফ মেকানিক


আরও পড়তে পারেন….
চুপমানুষ ।। সুস্মিতা চক্রবর্তী
আমার দু’আনার নাট্যজীবন ও বালুরঘাটের নাট্যচর্চা : তুহিন শুভ্র মন্ডল
কবিতাগুচ্ছ ।। ইন্দ্রনীল সুমন

About the author

নরসুন্দা ডটকম