মজিদ আজ বেশ চিন্তিত। প্রতিদিন একই রকম ভুল সে মানতে পারছে না। নিজের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। এক সপ্তাহ বাকী অথচ প্রজেক্ট প্রোফাইল এখনো তৈরি করা হয়নি। এ নিয়ে অফিসের এমডি তার ওপর খুবই ক্ষিপ্ত।
চাকরি চলে যেত যদি-না মজিদ এমডির ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর বিশেষ পরিচিত না হতো। এখনও ওই ব্যক্তির কারণেই চাকরিটি তার টিকে আছে।
টেবিলে মাথা নুইয়ে মজিদ দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছে। দিন যত ঘনিয়ে আসছে রিপোর্ট তৈরি নিয়ে তার মধ্যে ততো টেনশন বাড়ছে। প্রচ- মাথাব্যথা শুরু হয়েছে। কিন্তু এ মুহুর্তে অফিসের কাউকে বলতে পারছে না। ওষুধ খেয়ে একটু বিশ্রাম নেওয়া দরকার ছিল। বিষণœতার মেঘ তার চোখেমুখে। একবার ভাবে, যা হবার হবে-আজ লাঞ্চের পর অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় চলে যাব।
দুরুদুরু বুকে মজিদ অফিসের এমডি আফজাল হোসেনের কক্ষে প্রবেশ করে। ভেতরে ঢুকে তার শারীরিক সমস্যার কথা বলতেই এমডির মগজের নিউরনে চিনচিন করে রাগ চড়ে যায়, চাঁদি দপ্দপ্ করে। বহুকষ্টে নিজেকে সংযত করেন। তারপর মজিদকে একটু মৃদু ধমক দিয়ে বলেন, ‘অসুখের কথা থাক। কাজের কথা বলেন। বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকদের কাছে যা ইচ্ছে হয় বলেন। অফিসে এসে কাজ ছাড়া কোনো অজুহাত দাঁড় করিয়ে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা না বলাই ভালো’।
গড়গড় করে কথাগুলো বলে থামলেন তিনি। শুনে মজিদের মুখটা অভিমানে ভরে ওঠে। বুঝে উঠতে পারছে না, তখন কী বলা উচিত তার। আগামী ক’দিনের মধ্যে ফাইল প্রস্তুত হয়ে যাবে-মজিদের এমনতর কথায় তিনি আশ্বস্ত হতে পারছেন না। নিরুপায় হয়ে নিজেকে সংযত করেন তিনি। প্রস্তাব রাখেন এ কাজে মজিদের সাথে অন্য একজনকে যুক্ত করতে। তিনি ডেকে পাঠালেন সদ্য অফিসে যোগদান করা মারিয়াকে। মজিদ এই অফিসে পাঁচ বছর ধরে চাকরি করলেও এমডি তাকে পদোন্নতি না দিয়ে সেই পদে একজন নারীকে নিয়োগ দিয়েছেন। মারিয়া জয়েন করেছে তিন দিন হয়ে গেছে।
অথচ একবারও মজিদের সাথে তার সরাসারি দেখা বা কথা হয়নি। মারিয়া অবশ্য এখানে আসার আগে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে একই পদে তিন বছর কাজ করেছে। কথায় আছে ‘নারীদের তুলনায় পুরুষরা ছোট ছোট অক্ষর ভালোভাবে পড়তে পারে। আর নারীদের শ্রবণশক্তি পুরুষের তুলনায় বেশি’। যার কারণে তিন বছরের মধ্যেই প্রজেক্টের প্রকল্প বিষয়ে সে বেশ পারদর্শী হয়ে উঠেছে। আর সে কারণেই পদোন্নতি দিয়ে তাকে এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জীবনের পথে চলতে অনেক বাধা-বিপত্তির সম্মুখিন হওয়া স্বাভাবিক। এরূপ বাধা সামনে এগিয়ে চলার ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। দুঃখের মধ্য দিয়েই বাধা-বিপত্তিকে জয় করার সাহস এবং আত্মবিশ্বাস পাওয়া যায়। আমাদের বিজয়ী হওয়ার শিক্ষাই নেওয়া উচিত-বিজিত হওয়ার নয়। সম্ভবত এমন ধারণা মেনেই সামনে এগুতেন আফজাল হোসেন। তিনি আপদমস্তক কাজপাগল মানুষ এবং নিয়মের অনুবর্তী। কথা বলেন কম, শোনেন বেশি। নিষ্ঠা আর কঠোর পরিশ্রমের ফলেই আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের একজন। কথায় আছে ‘সফল মানুষেরা খুব বিরাট কিছু কাজ করেন না। তারা সামান্য কাজকেই তাদের নিষ্ঠা ও সততা দিয়ে বৃহৎ করে তোলেন’। তাই তারা সমাজে সফল মানুষ হয়ে ওঠেন।
মারিয়া আফজাল হোসেনের কক্ষে গেলে তাকে মজিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি মারিয়াকে রিপোর্ট তৈরিতে মজিদকে সহযোগিতা করার কথা বলে জরুরি কাজে বাইরে বেরিয়ে পড়েন। প্রথম দেখায় একে-অপরে যেরকম কুশল বিনিময় হয়, দু’জনের সেরকমই হলো। খানিকক্ষণ নীরবতা পালন। আফজাল হোসেন চলে যাওয়ার পর মারিয়াই প্রথম বলে- ‘অফিসে কেউ আমরা কারো প্রতিপক্ষ নই। প্রোফাইল তৈরিতে যেভাবে আপনি চাইবেন, সেভাবেই আমি আপনাকে সহযোগিতা করতে চেষ্টা করব’। এমন প্রতিভা দেখে ও তার কথা শুনে মজিদ মুগ্ধ হয়ে যায়। এমন হাসিখুশি আশ্চর্য মেধার মেয়েকে আর কোথায় সে দেখেছে মনে মনে তা আবিষ্কার করতে লাগল।
জড়তা ঝেড়ে মজিদ বলে ওঠে-চলেন আমাদের কাজের জায়গায় যাই। সেখানে গিয়েই পুরো বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছি। দু’জনে মিলে সিদ্ধান্ত হয়, প্রথমে মজিদ খসড়া রিপোর্ট তৈরি করে মারিয়াকে দেবে। সে ওই রিপোর্ট দেখে সংশোধন-পরিমার্জন করে পাঁচ দিনের মধ্যে এমডির কাছে জমা দেবে। কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছে মজিদ। এ সমাজে পুরুষ মাত্রই কোনো নারীর অধীনে কাজ করতে চায় না। সিনিয়র হিসেবে কোনো জায়গায় নারী থাকলে পুরুষরা সহজে তা মানতে চায় না। এ নিয়ে প্রায় সব জায়গায় পুরুষকে নিজের মধ্যে খিটখিটে স্বভাব পোষণ করে থাকে। অনেকে নারীর অধীনে কাজ করতে না পেরে আত্মসম্মানের অজুহাতে চাকরি ছেড়ে চলে যান।
নারীকে সমাজনির্মিত পথ অনুযায়ী চলতে হয়। সমাজে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূরীকরণে সবার আগে প্রয়োজন পরস্পরে মানসিকতার পাশাপাশি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। তাহলেই নারী তার যোগ্যতার ভিত্তিতে নিজের স্বকীয়তা ধরে রেখে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে পারবে। আর নারী তার দীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় এক সময় সফলকাম হবে।
মজিদের মাথাব্যথা কিছুটা কমেছে। অসুস্থতার কারণে অফিস ছুটির আগেই বাসায় ফেরার ইচ্ছে থাকলেও সেদিন ফেরে অন্যদিনের চেয়ে অনেক পরে। এখন থেকে নারীর অধীনে তার কাজ করতে হবে-ভেবে সে অস্বস্তি বোধ করছে। পরক্ষণেই মনে মনে ভাবে-অফিসে এ নারীর অধীনে কাজ করলে তার সমস্যা হবে না। অন্তত প্রথম পরিচয়ে মজিদের তাই-ই মনে হলো।
বিশ্ব মা দিবস গেছে। অথচ রোজ কয়েকবার ফোনে মার সাথে মজিদের কথা হলেও গতকাল একবারও কথা হয়নি। গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ মা একা থাকেন। পৈতৃক ভিটেমাটি ছেড়ে ইট-পাথরের এই শহরে তিনি থাকতে পছন্দ করেন না। তাই মাকে এখানে এনে রাখতে পারছে না মজিদ। ছোটবেলায় মজিদের স্কুলে পড়াকালীন এক সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা মারা যান। সেই থেকে মা-ই মজিদের সব। সামান্য জমিজমা দেখভাল করে মা অনেক কষ্ট করে তাকে শহরে এনে মাস্টার্স পড়িয়েছেন। মজিদের পড়াশুনা শেষে একটি ভালো কোম্পানিতে চাকরি হয়ে যায়।
চাকরি ক্ষেত্রে কাজ করছে সাফল্যের সঙ্গে। এমডি ভালো মানুষ হওয়ায় সুন্দর মনের স্পর্শে তার মতো অফিসের সবাই এক সময় পাল্টে যায়। মজিদের সমস্যা শুধু প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে। সবার মতো হলেও কেবল প্রেম বিষয়ে কারও সঙ্গে তার মতের মিল হয় না। মজিদ মনে করে, সে কখনো সকালের জন্য অপেক্ষা করে না। কোনো নারীর ধ্যানে সে রাত জাগে না। প্রত্যেক নারীই পরস্ত্রী। সব নারীই বড্ড অচেনা তার কাছে। প্রতিটি নারীর বুকই দলিত-মথিত। প্রত্যেকটি নারীর চোখে বালুর মাঠে শেয়ালের চোখের অন্ধকার জেগে থাকে। তাই প্রেমের প্রতি প্রচ- বিরূপ সে। প্রেম কীভাবে সমাজে ক্ষতি করছে, কত সম্ভাবনাময় ছেলেমেয়ে প্রেমে পড়ে তাদের জীবন নষ্ট করে-এ নিয়ে একটি সেমিনার করতে চায় সে।
মজিদের যথেষ্ট বয়স হয়েছে। বিয়ের জন্য মা বারবার তাগিদ দিলেও সে এখনই বিয়ে করতে রাজি হয় না। এ নিয়ে মা-ছেলের মধ্যে অভিমান চলছে। বয়স হয়েছে তবুও কেন বিয়ে করবে না! এসব ভেবে ভেবে ক্ষোভের পাশাপাশি সে বিচলিত হয়ে পড়ে। ইদানিং মাকে নিয়ে মজিদ অনেক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। অতিমাত্রায় টেনশনের ফলেই সম্ভবত তার কাজেকর্মে ভুল হচ্ছে। চাকরির কারণে একমাত্র ছেলে হয়েও মার কাছে থাকতে পারছে না। আবার চাকরি ছেড়ে বাড়িতে গিয়েই-বা কী করবে। মা-ও নিষেধ করেন। এমন দোদুল্যমান সিদ্ধান্তে সবসময় তার মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে। ফলে কাজকর্মে ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক।
আজকাল প্রকৃতিও তার সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। আসলে প্রকৃতিটাই ওই রকম। মনের আকাশে মেঘ জমলে ঘনঘোর কৃষ্ণবর্ণ হয়ে জমাট বাঁধবে, তারপর কখনো এক পশলা বৃষ্টি ঝরিয়ে তবেই রক্ষা। মাঝেমধ্যে অনেক আয়োজনে কালবৈশাখির মতো বিজলি-বাতাসে বৃষ্টির সাথে বাজ ডাকে আকাশ জুড়ে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর থেমেও যায়। তখন শহরের রাস্তাঘাটে হাঁটুপানিও জমে! কাজে মনোযোগ দিতে পারছে না সে। এলোমেলো ভাবনাগুলো কেমন ওলট-পালট করে দিচ্ছে। এমন সময় টেবিলঘড়িতে তাকাতেই দেখে রাত তিনটা বেজে গেছে। তিনটা মানে অনেক রাত।
একটুখানি ঘামে ও। আর পারছে না বসে থাকতে। এখন ঘুমুতে না গেলে সকালে অফিসে যেতে পারবে না। মশারি টাঙিয়ে ঘুমুতে যাওয়া তার অনেক দিনের অভ্যাস। সেটিও আজ টাঙানো যাবে না। মজিদের কথামতো গতকাল সকালে গৃহপরিচারিকা এটি ধুইয়ে বারান্দায় শুকাতে দিয়ে চলে গিয়েছিল। বিকেলে ঝড়ো হাওয়ার সাথে ভারি বৃষ্টিপাতে সেটি ভিজে গেছে। অতএব মশারি ছাড়াই আজ তাকে ঘুমাতে হবে। তবে ইদানিং শহরে মশার যে উৎপাত বেড়েছে, তাতে কতক্ষণ সে টিকতে পারবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। মজিদ বিছানায় গিয়ে চেষ্টা করল ঘুমুতে। ঘুমের মধ্যে সহসা সে পুরনো স্মৃতিকে স্মরণে আনে এবং অনেকদিন দেখা না হওয়ায় তার মাকে প্রচন্ড রকমভাবে অনুভব করে।
ভোরের সূর্য উঁকি দেওয়ার আগেই দুঃস্বপ্নে তার ঘুম ভেঙে যায়। ধড়ফড়িয়ে জেগে ওঠে। সাতপাঁচ না ভেবে তখনই সিদ্ধান্ত নেয়, আজই মাকে দেখতে গ্রামের বাড়ি যাবে। কতোদিন মায়ের মায়াবি মুখখানি দেখে না সে, কতোদিন…। মুহুর্তেই প্রজেক্ট প্রোফাইল তৈরির কঠিন দায়িত্বের কথা মনে পড়ে যায় তার। অগ্নিশিখার মতো ধপ করে জ্বলে ওঠে সে। মনে মনে বিড়বিড় করে ‘চাকরি চুলোয় যাক, আমাকে মা’র কাছে যেতেই হবে’।
ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে পথে নেমে যতদূর চোখ যায়-দেখে, রাস্তায় মুখোশেরা নৃত্য করে। সভ্যতার ছাইভস্ম রক্তস্রােতে ভেসে যায়। সোজাসুজি তাকাতেও পারে না, ¤্রয়িমাণ হয়ে পড়ে সংকোচে। তিন রাস্তার মোড়ে একটি চায়ের দোকানে ইতস্তত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে আছে বেশ ক’জন তরুণ। সামনে এগুতেই কথা শুনে মনে হয়, জীবনের অভিজ্ঞতা বুঝি তাদের বয়সকেও অতিক্রম করেছে অনেক আগেই।
পাশের চেয়ারটিতে ধপাশ করে বসে পড়ে মজিদ। দ্রুত এক কাপ চা দিতে বলে। চশমাটা নামিয়ে রাখে টেবিলে। সোনালি ফ্রেমে রিমলেন্স গ্লাস। নাকের ডগায় এই চশমা চড়ানো তার বেশিদিনের নয়। পকেট থেকে গোল্ডলিফ সিগারেট বের করে ধরায় সে। ম্যাচের কাঠিতে সামনে বসা মুদির দোকানির কিশোরী মেয়েটির টান টান বুক দেখে দিয়াশলাইটা জ্বলে ওঠে দ্রুতই। আর মজিদের বুক ভরে ওঠে সিগারেটের সুখটানের ধোঁয়ায়।
এক সময় পাশের রেললাইনে ট্রেন এসে থামে। মাত্র দশ মিনিটের জন্য এখানে ট্রেন যাত্রা বিরতি দেয়। প্লার্টফর্মে ট্রেন পৌঁছে হুইসেল বাজানোর সাথে সাথে মজিদ দোকানিকে চায়ের দাম মিটিয়ে দ্রুত সামনে এগুতে থাকে। লোকজনের ভিড় ঠেলে নির্দিষ্ট কক্ষে গিয়ে নিজের সিটে বসে। ট্রেন ছুটে চলে শা শা শব্দে। অন্যরকম এক পরিবেশ। তখন মজিদের মনের পর্দায় ভেসে ওঠে বালুকাবেলার স্মৃতিময় শৈশব।
অনেক দিন পর মাকে দেখবে-ভেবে বুকের ভেতর একরকম সুখ অনুভব করে মজিদ। ট্রেনে জানালার পাশে বসে বাইরে একমনে অপলকনেত্রে প্রকৃতিকে দেখছে সে। প্রকৃতি আর দূরের ওই আকাশের দিকে তাকিয়ে তাদেরকে সে উপলব্ধি করছে নিজের মতো করে। মনে মনে বিড়বিড় করে বলে ওঠে-যে গ্রামে বেড়ে ওঠা, যে বাতাসে নিয়েছে নিঃশ্বাস, ছুটে বেড়িয়েছে প্রতিটি প্রান্তর-শৈশব, কৈশোরের সেই গ্রামের সঙ্গে সম্পর্ক কখনো ছিন্ন হয়ে যায় না। স্মৃতিমাখা গ্রাম আর সহজ সরল মানুষের মায়া মনের সঙ্গে মিশে থাকে।
অন্যদিকে ইট-পাথরের শহরের জীবন কঠিন হচ্ছে, সমাজ কঠিন হচ্ছে, মানুষে মানুষে সম্পর্কগুলো জটিল হচ্ছে-এ কথা এখন সবাই জানে। শহরে যারা থাকেন, তাদের অভিজ্ঞতাও তাই। তাছাড়া মধ্যবিত্তের জীবনে শুরু হয়েছে নানা ভাঙন-বিচ্ছেদ। সন্তানরা বড় হলে আলাদা হয়ে যায়। অনেকে বিদেশে চলে যায়। নিম্নবিত্তের জন্য শহরের জীবন তো নিরন্তর কষ্টের। একে তো ছোট একটি ঘরে অনেককে থাকতে হয়, তার ওপর চলাফেরার যন্ত্রণাটা কত প্রবল। খাঁচার মধ্যে কাটানোর মতোই নিম্ন আয়ের লোকজনের পারিবারিক জীবন।
খেলার মাঠ নেই, সময় কাটানোর জায়গা নেই, হয়তো সময় কাটানোর মতো কোনও সময়ও অনেকের নেই। তাদের সবার জন্য গ্রামের বাড়ি হচ্ছে সাময়িক মুক্তির একটি আহ্বান, আর সবাই মিলে একসঙ্গে একটা উৎসব কাটানোর সুযোগ। এ রকম ভাবতে ভাবতেই বাড়ির উঠোনে পা রাখে মজিদ। আচমকা কেমন যেনো একটা শিহরণ জাগে তার মনে। চোখ দুটো জলে ভিজে ঝাপসা হয়ে আসে। মাকে দেখার আকুলতায়-দ্রুত পা চালায় সে।